নিপা বেপারী
২০১০ সাল, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে 'ধাত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা' ওয়ার্ডে দায়িত্বরত। রোজার ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে নিয়মিত জনবলের থেকেও কম চিকিৎসক দিয়ে চলছে (স্বাভাবিক সময়েই পর্যাপ্ত লোকবল থাকেনা আর দক্ষিণবঙ্গের মেডিকেল কলেজ হওয়াতে আরও অবহেলিত)। ৪০ বছর বয়সী এক প্রসূতি মা বাইরের ক্লিনিকে প্রসবের পর প্রসবপরবর্তী জটিলতা (গর্ভফুল না পড়ার কারণে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ) নিয়ে ভর্তি হলেন। রোগীনীর রক্তচাপ,পালস্ পাচ্ছিনা। রোগী একেবারে সাদা (মেডিকেলের ভাষায় 'পেপারহোয়াইট এনিমিয়া')। নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ার কারণে রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের ছুটির কারণে সমস্যা আরও গুরুতর। রক্ত না দিলে এই রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা (গর্ভফুল অপসারণ করা) সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায়,রোগীর দুই হাতে চ্যানেল খুলে এক চ্যানেলে স্যালাইন, আরেক চ্যানেলে রক্তের অপ্রতুলতার বিপদকালীন কিছুটা সাপোর্ট প্লাজমাসল চালানো হলো। জীবনরক্ষকারী আরও কিছু ঔষধ চালানো হলো। এভাবে দুইদিন পার হওয়ার পর রক্ত পাওয়া গেলো, তারপর রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গর্ভফুল অপসারণ করা হলো। ধীরে ধীরে রোগীর উন্নতি হলো এবং যমে-মানুষে টানাটানির পর এক মা হাসিমুখে বাড়ি ফিরলো। আমার চিকিৎসাসেবা জীবনের অন্যতম একটা সাফল্যের ঘটনা এটা। প্রতিটি চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রতিদিন এরকম অসংখ্য বিজয়গাঁথা লেখা হয়,যা হয়তো সাধারণের অজানাই থেকে যায় কিন্তু প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মীর মনে আশার আলো জ্বেলে যায়।