ইউসুফ জামিল ফয়সাল
প্রত্যেক মানুষই জীবনে সফল হতে চায়। যদিও খুব কম মানুষই শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। তারাই জয়ী হন, যারা জীবন যুদ্ধে হার না মেনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প বাঁধেন। এমনি এক স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু জয়ী হতে চেয়েও হারতে হয়েছে বার বার। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। এভাবেই ঘুম ভাংতো প্রতিটি সকাল। আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান । অভাবের তাড়নায় আমার লেখাপড়া ক্লাস নাইনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম । আমি ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলাম । আমার মামা এই অবস্থা দেখে, তিনি আমার পড়াশোনার খরচের দায়িত্ব নিলেন । আমি খুঁজে পেলাম আবার আমার সেই স্বপ্নের রাস্তা। পা বাড়ালাম খুব ভেবে চিন্তেই। শুরু হলো নতুন করে পথ চলা। আমার মামার সহায়তায় আমি ২০০৯ সালে এসএসসি, ২০১১ সালে এইচএসসি পাশ করি । এরপর আমার চাকরি হয় ভালো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে । আজ আমি একজন চাকুরীজীবি। এই চাকরী আমার জীবনের জন্য এনে দিয়েছে নিশ্চয়তার পাশাপাশি আমার স্বপ্ন পুরনের রাস্তা। অযাচিত ভাবনাগুলো আর আমাকে এখন আর অপর্যদস্ত করে না। আজ আর সেই ছোট বেলার ইচ্ছাগুলোকে স্বপ্ন মনে হয় না। সেই সব স্বপ্ন আজ আমার হাতের মুঠোয়। আমি হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে পড়াশুনা করতে পারতাম। পারিনি তার কারণ, পরিবারের আমার ছোট তিন ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ এখন আমি নিজেই বহন করি । এখন আমার বেতনও আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে । তাই চাকরির পাশাপাশি এখন আবার স্মাতক সমমান কোর্সে ভর্তি হয়েছি । আল্লাহর রহমতে পড়াশোনা শেষ করবো ইনশাআল্লাহ। তবে এতটুকু বলতে পারি আমি কি ছিলাম, আজ কোথায় আছি এবং ভবিষ্যতে কোথায় যাচ্ছি। এখন আর স্বপ্ন দেখার তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। যতটুকু স্বপ্নে ভেবেছি তারও বেশি পেয়েছি জীবন সীমানায়। আমাকে আর বেকার হয়ে রাস্তায় ঘুরতে হয় না। কারো সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে থাকতে হয় না। সমাজের কয়েকটা সফল ব্যক্তির লাইনে নিজেকে দেখতে এখন আর লজ্জা লাগে না। যখন আমার প্রশংসা সবাই করে তখন আমার বাবা-মায়ের চোখে হাসি দেখতে পাই। আমার এটাই জীবনের বড় পাওয়া। আমার কষ্টগুলো এখন সুখের হাতছানি দেয় প্রতিটি মুহুুর্ত। আমার এই সংগ্রামী জীবন সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা করে দিয়েছে আমার জ্ঞান-সাধনা ও পরিশ্রম। আমার জ্ঞান অর্জন, স্যারদের নিবিড় পরিচর্যা ও সুনিদির্ষ্ট পাঠদান আজ আমাকে একজন সফল পরিশ্রমী ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলেছে। এখন আমি সরকারী চাকরির চেষ্টা করছি । একটা সরকারি চাকরি পেলে আমার জীবন হবে পরিপূর্ণ । এমন হাজারো জীবনের গল্প রয়েছে আমার মতো অনেকের। শ্রষ্ঠার নিকট আমার প্রার্থনা থাকবে, যারা গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আছে তারা যদি একটু শিক্ষার সুযোগ সহায়তা পায়, তাঁরা শুধু দেশেই নয় দেশের বাহিরেও সুনাম ছড়াবে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার প্রত্যয় নিয়ে প্রত্যেক ছাত্র/ছাত্রীর জীবনে সফলতার গল্প জন্মানোর প্রচেষ্টা সফল হবে বার বার এ প্রত্যাশাই করি । ইউসুফ জামিল ফয়সাল ময়মনসিংহ