"বিজয়ী লক্ষী নারী"

জিন্নাত আরা আলম তিসা

সকাল টা শুরু হত ঘুম ঘুম চোখে মায়ের ডাকাডাকির পিড়াপিড়িতে। এই কোচিং এ যাবিনা আজ?কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে? আম্মু,উঠছি ত আরেকটু ঘুমায়..... সেই একটু ঘুমেই অনেক খানি সময় গড়িয়ে যেত।ঘুম ঘুম চোখে উঠে গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে,মুখ মুছতে মুছতে মোবাইলের দিকে চোখ যেতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যেত!আরে মাত্র ৩০ মিনিট!এরেএ আজ আবারো লেইট!তড়িঘড়ি করে ড্রেস পরে নিতে নিতে আম্মুকে বলত ব্যাগ রেডি করে দিতে।আম্মু নাস্তার প্লেট হাতে নিয়েই রেডি হতে হতে খাইয়ে দিত যতটুক সম্ভব। এভাবে করে মেয়েটা স্কুল গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখল।এখনো তার ঘুমকাতুরে অভ্যাস টা যাইনি।রোজ একই কাজ শীত কিংবা গরমে মোবাইলে তিন-চারটে এলার্ম সেট করতে হতো।সকালে উঠা তার জন্য বড্ড "প্যারাদায়ক" মনে হত।খুব আমোদ-প্রমোদে দিন যাচ্ছিল।কলেজ লাইফ দারুণ উপভোগ করতে লাগল মেয়েটি।কখনো কোনো পারিবারিক বা আর্থিক প্যারা নিতে হইনি। এভাবে করে অনার্স প্রথম বর্ষে তার পদার্পণ।সদ্য ১৮ হবে মেয়েটির।বয়সের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি ই সে প্রথম বর্ষের ছাত্রী হয়ে গেল।হঠাৎ একদিন আচমকা হাওয়ার মত জীবনের সূত্র পালটে গেল।বাবার ব্যবসা টা আর নেই!এটাই ছিল চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের একমাত্র আয়ের সম্বল।জীবনের বিপরীত মুখী হাওয়া টা এবার প্রথম বারের মত তার গায়ে লাগল!যে বয়সে মেয়েটা কে বন্ধু-বান্ধবীর সাথে দিব্যি সময় কাটানোর কথা ছিল সে বয়সেই সব আনন্দ বিসর্জন দিয়ে অস্তিত্ব টিকে রাখার লড়াইয়ে বড় সন্তান হিসেবে পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিল।শুরু হল আরাম আয়েসের জীবন ত্যাগ করে উপার্জনের পথ চলা। একটা প্রাইভেট স্কুলে তার চাকরি হলো।সে কনকনে শীতের সকালে ৬:৪৫ এ টিউশনে উপস্থিত হয়ে যেত।সকালে দুটো টিউশন শেষে স্কুলে ক্লাস করতো।স্কুল শেষে দুপুর ১:৩০ থেকেই বিকেল ৪:৩০ অব্দি টিউশনি করেই সময় কেটে যেত।দৈনিক ১২ ঘণ্টা অব্দি শারীরীক, মানসিক পরিশ্রম শেষেই ঘুম ঘুম চোখে ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরত।বাড়ি ফিরে মায়ের যত্নের কমতি ছিলনা।মাস শেষে খামে ভরা টাকাতেই সে সুখ খুঁজে পেত। পুরো মাসের ক্লান্তি,শারীরীক অসুস্থতা নিমিষেই হার মানত টাকার খামের কাছে.. এভাবেই সে এক কাপ চা বানাতে না পারা মেয়ে থেকে আজ উদ্যমী নারী হয়ে উঠল।মেয়েটির এখন ছোট্ট উদ্যোগ আছে খাবারের।সদ্য হওয়া বাচ্চার মতই সে এটাকে পরিচর্যা করছে।পরিশ্রমী একজন নারী।যে সব প্রতিকূলতা কে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলার দৃড় বিশ্বাস রাখে।যে সব মূহুর্তেই নিজেকে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমি ই সেই কবি কাজী নজরুলের " বিদ্রোহী "কবিতার বিজয়ী লক্ষী নারী।