সৈয়দ রাতুল হাসান
আমার আব্বু একজন মুক্তি যোদ্ধা। একটু অন্য রকম মানুষ। ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসর করে গল্প করবেন এমন ধরনের মানুষ সে না। তাদের মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা আমরা জানি।দু একটা তার মুখ থেকে শুনেছি। বেশিরভাগই তার সহযোদ্ধা বন্ধু ও আমার চাচার কাছ থেকে শুনেছি। একদিন একটি মুক্তি যুদ্ধের সিনেমা দেখাচ্ছিলো টিভিতে। তিনি এসে বেশ কিছুক্ষণ দেখে একটু অন্য মনস্ক হয়ে গেলেন। হটাৎ নিজ থেকেই বলা শুরু করলেন। তারা যখন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তার মা ঠিকই টের পেয়েছিলেন। কিন্তু শব্দ করে কান্না করেনি, যাতেকরে আসেপাশের মানুষ টের না পায়। গ্রামের বেশকিছু লোক জামাত পার্টি করতো জারা নাকি বড় বাঁশের আগায় পাকিস্তানের পতাকা টানিয়ে রেখেছিলেন। যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে তারা সেটিকে নষ্ট করার সময়ও গ্রামের এক মুরুব্বি টের পায়। কিন্তু কাওকে কিছুই বলেনি। তারা কেউ যদি সেদিন শব্দ করতো তাহলেই হয়তো তাদের এতো সহজে যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব হতোনা। অথচ তাদের নাকি মুক্তিযুদ্ধ কি বা স্বাধীনতা কি তা খুব একটা বুঝবার কথা না। কথাগুলো বলে আব্বা চলেগেলেন। আসলে আমি নিজেও কিছু বয়স্ক মানুষকে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোল বলে সম্বোধন করতে। হয়তো সেই সময় আব্বু বা তার সহযোদ্ধা বন্ধুরা ভাবতো যে তারা এসব বুঝবেইনা। আমাদের তো অনেক সময় বিজয় দিবসেও সারারাত জেগে রোড সাজাতে কতো বাধা। অথচ ১৯৭১ সালের এমন কিছু মানুষ জারা নির্দ্বিধায় নিজের ছেলে বা সন্তানদের যুদ্ধে যেতে দিয়েছিলেন বিধায় পেয়েছি ভালোবাসার বাংলাদেশ।