একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প

Plabon Banik

নিচের ছবিটিতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা,একজন নির্ভীক ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব,গোপালগঞ্জ জেলার কৃতিসন্তান, "মোহাম্মদ আবু হোসেন স্যার" (প্রতিষ্ঠাতা : অনির্বাণ স্কুল,গোপালগঞ্জ) আমার শিক্ষাজীবন এর প্রথম অধ্যায় শুরু হয়েছিলো স্যারের হাত ধরেই।ছোটবেলায় অতশত বুঝতাম না তবুও স্যারের একটি জিনিস ভালো লাগতো তখন থেকেই।সেটি হলো স্যারের মুখে "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস"। কিভাবে একজন বিশ্ববিদ্যালয় এর পড়ুয়া ছাত্র হতে হলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ সেটাই তুলে ধরবো আপনাদের সামনে। তৎকালীন সময় স্যার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে তিনি তার বন্ধুদের সাথে একজোটে রওনা হন একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের উদ্দ্যেশ্যে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)।তিনি এবং তার বন্ধুরা খুব কাছে থেকে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে শুনেছেন "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম"। এ ভাষণ শোনার পর থেকেই স্যার এবং তার বন্ধুদের মাঝে "দেশ ও জাতির জন্য কিছু একটা করতে হবে" এই চেতনার সৃষ্টি হয়।কয়েক দিন পর ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করলো ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন স্থানে। শুরু হলো হত্যা ও নির্যাতন।তিনি ভাবলেন, আর বসে থাকার সময় নেই। দেশ ও জাতিকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে হলে যুদ্ধে যেতেই হবে।যেই কথা সেই কাজ। বন্ধুদের নিয়ে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। গোপালগঞ্জে এসেই যুগশিখা ক্লাবে (বর্তমানে যুগশিখা স্কুল)বাঁশের লাঠি এবং ডেমো রাইফেল দিয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন স্থানীয় যুবকদের নিয়ে।কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন এই বাঁশের লাঠি এবং ডেমো রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সুসজ্জিত অস্ত্রশস্ত্রের সামনে টিকে থাকা দুষ্কর এবং সেসময় তিনি জানতে পারলেন ভারতে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ হচ্ছে।তাই তিনি মনোস্থির করলেন তিনি শরণার্থীদের সাথে ভারতে গিয়ে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিবেন।তিনি শরণার্থীদের সাথে শরণার্থীবেশে ৬দিন টানা হেটে হেটে বনগা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করলেন। বনগা গিয়ে ক্যাম্প এ প্রাথমিক বাছাই শেষে প্রশিক্ষণ নিতে চলে গেলেন ভারতের চুরিলাম ট্রেনিং ক্যাম্পে,আগরতলা।সেখান থেকে পরবর্তীতে আসাম ক্যান্টনমেন্টে এক মাসের গেরিলা ট্রেনিং নিলেন এবং পরবর্তীতে নেফা ক্যাম্প (অরুনাচল প্রদেশ) থেকে সম্মুখ সমরের প্রশিক্ষণ নিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে কল্যাণী ইনডাকশন ক্যাম্পে এলেন এবং পরবর্তীতে ভারতের বসিরহাটের নিকটবর্তী টাকিতে ছিলো ৯ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার যেখান থেকে স্যার নিযুক্ত হলেন সেক্টর ৯ এ।এই সেক্টরের মুক্তিবাহিনী দেবহাটা ও শ্যামনগর থানা আক্রমণ ও দখল করে। নৌ-প্রহরার মাধ্যমে বরিশাল-পটুয়াখালী নদী এলাকায় প্রাধান্য বিস্তার করে তারা। ডিসেম্বর মাসে চূড়ান্ত আক্রমণের আগে এ সেক্টরকে ৮ নম্বর সেক্টরের সঙ্গে একীভূত করা হয়, যার দায়িত্বে ছিলেন মেজর মঞ্জুর।৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী পুরো গোপালগঞ্জ ঘিরে নিলে হানাদারবাহিনী কোণঠাসা হয়ে মানিকদাহ নদী দিয়ে নৌকা নিয়ে খুলনার উদ্দ্যেশ্যে পালিয়ে যায় এবং ৭ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলা হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। স্যার এর বয়স এখন ৭৫। বার্ধক্যের কারণে তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ।তবুও স্যারের আকাঙ্খা জাতির জনকের সোনার বাংলাকে আরো সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার।সেই লক্ষ্যে তিনি এখনও তার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় "অনির্বাণ স্কুল" এ অধ্যাপকতা করছেন এবং শতশত নবীন জীবন দেশমাতৃকার সেবার লক্ষ্যে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলছেন যার জন্য আমি তথা আমার মত সকল শিক্ষার্থী স্যারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। #মোহাম্মদ আবু হোসেন স্যার (বীর মুক্তিযোদ্ধা) ১৯৭২ এর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্র ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৩ এ হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্র ইউনিয়ন এর সহ-সভাপতি ১৯৭৪- এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক।