খায়রুল আলম রাজু
একটি কথা সবার জানা। "আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ।" সবাই কথাটির পক্ষেই। এতে কারোর দ্বিমত নেই। তবে এই শিশুদের প্রতি কি রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব আছে?হ্যাঁ, অবশ্যই। শিশুদের খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা,সকল ক্ষেত্রেই সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকা উচিত।আঞ্চলিক একটি কথা আছে,“কিছু পেতে হলে, কিছু দিতে হয়”। তেমনিভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ আজকের শিশুদের নৈতিকতার সাথে গড়তে পারলেই, ভবিষ্যতে এর ফল ভোগ করবে। এর জন্য চাই, শিক্ষা। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড সোজা রাখতে চাই—পরিচর্চা। আর পরিচর্চা হলো;শিশুদের প্রতি আমাদের আদর-স্নেহ ও ভালোবাসা। আজকের শিশুই হবে বালক-বালিকা,কিশোর-কিশোরী,বৃদ্ধ -বৃদ্বা। এরাই হবে একদিন মা-বাবা। শিক্ষিত জাতি গঠনে নারীর ভূমিকা–তুলনাহীন।আমরা একটি কথা প্রায়ই শুনি,শিক্ষিত মা মানেই, “শিক্ষিত জাতি”।কথাটি সত্যিকার অর্থেই সত্যি। কেননা একটি শিশুর হাতেখড়ি মায়ের কাছেই শেখা ।প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন,নম্রতা ও ভদ্রতা পরিবার থেকেই শেখা। সুতরাং পরিবারই শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম ধাপ।যদিওবা বিষয়টি ছোট, কিন্তু এর প্রতিফল ও গতিপথ অনেক দূরের। তাই একটি শিক্ষিত জাতি পেতে হলে চাই,“শিক্ষিত মা”। আর শিক্ষিত মা পেতে হলে চাই, শিশুদের পরিচর্চা। শিশুদের প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব কিন্তু একার নয়। এতে পরিবারেরও ভূমিকা অপরিসীম। পরিবারই একটি শিশুর শ্রেষ্ঠ পাঠশালা। তাইতো শিক্ষিত জাতি গঠনের জন্য, শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি চাই খেলাধুলা সহ নানান সামাজিক কার্যক্রমের পারদর্শিতা। শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যয়াম, শারীরিক পরিচর্চা সহ চাই খেলাধুলা করার স্বাধীনতা। ফলে শিশুরা স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠবে। প্রকৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিবে। সর্বাবস্থায় আত্মপ্রত্যয়ি হয়ে উঠবে। রাষ্ট্র, সমাজ ও দেশ প্রেমে উদ্বত্ত হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিবে। সমাজবিরোধী কার্যক্রম হতে বিরত থাকবে। এতে রাষ্ট্র,সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নতি হবে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বিমোহিত হবে। দেশের উন্নয়নমূলক কাজে শিশুরা এগিয়ে আসবে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এরাই নেতৃত্ব দিবে। বিশ্ব দরবারে এই শিশুরাই দেশের সোনালী ইতিহাস রচনা করবে। পৃথিবীর পথে পথে উড়াবে, “লাল-সবুজের নিশান”।বিশ্বসভায় এই শিশুরাই তো দেশের হয়ে নেতৃত্ব দিয়ে , দেশের পরিচিতি তুলে ধরবে বিশ্বের কাছে। বিশ্ববাসীর কাছে। বিয়ষটা নিছক স্বপ্ন কিংবা কল্পনা নয়। আমাদের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার ফলই বাস্তবায়নের লক্ষ্য। আমরা যদি একটু কষ্ট করে, শিশুদের প্রতি নজর দেই;তবেই এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এর জন্য চাই, শিশুদের উন্নত ও মানসম্মত শিক্ষা। শিক্ষার জন্য চাই, সুসাস্থকর ও উন্নত পরিবেশ। সুসাস্থকর পরিবেশের ফলে শিশুরা পাবে—শারীরিক সুস্থতা। আর শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন— চিকিৎসা। শুধু তাই নয়, শিশুদের মৌলিক চাহিদার পাশিপাশি, দিতে হবে চলার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা। তবেই শিশুরা হবে দেশ ও জাতির কর্ণধার। রাষ্ট্র ও সমাজের চালক। সুশীল সমাজের বাসিন্দা। তাদের ভবিষ্যৎ হবে, আলো ঝলমল। ফুলের মতো সুন্দর ও আনন্দময়। পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর প্রতিই চাই এমন দায়িত্বশীলতা। আর তখনি আমরা এক সুরে, হাত-হাত রেখে বলতে পারবো, তোমরাই আগামী তোমরাই সব— আলো জ্বেলে পৃথিবীতে জুড়ো কলরব।