করোনা যুদ্ধ

Md Mehedi Hasan

আমি মোঃ মেহেদী হাসান আমি ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ যুদ্ধ দেখিনি তবে আমি করোনার যুদ্ধ খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি। করোনার জন্য যখন ২০২০-এর মার্চ মাসে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হলো ঠিক তখনই আমাকে আমার পুরনো মেস ছেড়ে এপ্রিলের তিন তারিখ থেকে নতুন মেসে উঠতে হলো। নতুন মেস, নতুন পরিবেশ। তবে এই করোনার আতঙ্কের মধ্যেও নতুন মেস মেম্বাররা আমাকে সাদরে গ্রহণ করে নিলেন। তবে ঝামেলা শুরু হলো উঠার পর থেকে। আমি একটা টিসুনি করাই। আমাকে এই লকডাউনের মধ্যেও সপ্তাহে ছয়দিন দিন টিসুনি করাতে হতো। বাড়ির মালিক আর মেস মেম্বাররা এতে বাধ সাধলেন; লকডাউনের মধ্যে করোনার ঝুঁকি নিয়ে বাসা থেকে বাইরে গিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসা যাবে না। তাই শেষমেশ বাধ্য হয়ে দেশের বাড়ি শেরপুর চলে গেলাম। সেখানে গিয়েও দেখি একই অবস্থা। আমার বাসায় আসার ব্যাপারটা দেখে সবাই খুশি হবার পরিবর্তে মনে হলো অখুশি হয়েছে। কিন্তু এই করোনার মধ্যে তো আর কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সেখানেই থাকতে হলো। এরপর ঈদের ছুটি শুরু হলো। ছুটির আগের দিন টিসুনি শেষ করে বাসায় এলাম। রাতের বেলায় প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হলো। পরের দিন সকালে ১০২ ডিগ্রি জ্বর আর সমস্ত শরীর ব্যথা। জ্বর উঠছে আর ছাড়ছে । এরকম অবস্থায় নিজের অসুস্থতার কথা পরিবারের কারোর কাছে বলতে পারছিলাম না। তখন খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো কি করবো। নিজের জন্য পরিবারের সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারব না। এরমধ্যেই আমার শরীরে করোনার সব উপসর্গ প্রকাশ পেল। বুঝতে আর বাকি নেই যে আমি করোনা আক্রান্ত। তখন বাসা ছেড়ে যাবারও কোনো উপায় ছিল না। এরমধ্যে আমি একটা আলাদা রুমে আইসোলেশনে ছিলাম। পাশের রুমে থাকা বাবাকে ফোন দিলাম। সবকিছু খুলে বলতেই বাবা বললেন, দুশ্চিন্তা না করতে। নিজের রুমেই আইসোলেটেড থাকতে। আল্লাহ ভরসা। এরমধ্যে আমার প্রচুর কাশি এবং একটু শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। কাশিটা এতটাই ভয়ানক ছিল, বারবার মনে হতো এই বুঝি কাশি দিতে দিতেই মারা যাব। তখন সারাক্ষণ গরম পানির ভাপ নিচ্ছিলাম। আর আমার এক ডাক্তার বন্ধুর পরামর্শ মতো ওষুধ নিচ্ছিলাম। এই বিপদের সময়ে আমি আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছে পেয়েছি। তাদের সহযোগিতায় আর আল্লাহর অশেষ কৃপায় অবশেষে সুস্থ হয়েছি; নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। এই সময়ে ফ্যামিলির লোকজনের পাশাপাশি আমার বন্ধুগন, আর আত্মীয়-স্বজন আমাকে সারাক্ষণ মানসিকভাবে সাপোর্ট করেছেন। সকলের নিকট আমি কৃতজ্ঞ।