নূর হাসান মুনাদ
আব্বু আম্মু ইদানিং প্রায়ই বকে থাকেন। পড়াশুনা নাকি আমি ছেড়ে দিয়েছি।প্রথমে শুনে তেমন কিছু মনে হতো না।তবে আজকাল বড্ড খারাপ লাগে।যখন বাবা-মায়ের দুজনের কেউ একজন বকেন,তখন আমার নিজের কাছেই মনে হতে থাকে আসলেই তো আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি।আচ্ছা,এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে বড় হয়ে কি করব আমি? এমন ঘোরে আমি সাধারণত কিছু সময় ভুগি।সামান্য সময়ের এ ঘোর ভেঙে গেলে আমি সেই আবার আগের মতোই হয়ে যায়। ৩১শে ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ রাতের কথা।বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।সময় তখন আনুমানিক সাড়ে এগারোটা কি বারোটা।রাস্তায় দেখলাম গাড়ির প্রচুর জ্যাম আর উপচেপড়া মানুষের ভিড়।ভিড়ের মাঝের মানুষগুলো সব হচ্ছে বিভিন্ন গার্মেন্টস ,ফ্যাক্টরির শ্রমিক। করোনাকালীন সময় সব মানুষ তাদের চাকরি বাঁচাতে যে যেভাবে পারছে ছুটে আসছে।দৃশ্যটা আমার বুকের মাঝে একটা কম্পন তৈরি করলো।নিজের অজান্তেই তখন চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগলো।কি একটা অমানবিক পরিস্থিতিরই না শিকার হচ্ছে এ মানুষগুলো। অনেকটা সময় আমি তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে,জ্যামের মাঝের মানুষের সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য গুলো দেখতে থাকি। কিছু সময় পর আমি যখন শুতে গেলাম রুমে।তখন আমার চোখে ঘুম আসছিলো না।বারবার মনে হচ্ছিল বারান্দায় যায়। কিন্তু আবার খারাপও লাগছিলো মানুষের কষ্ট দেখে।তাই একটা খাতা আর কলম নিয়ে বিছানায় বসে লিখতে শুরু করে দিলাম,এ বিষয় নিয়ে। আমি তেমন যে লিখতে পারি তাও কিন্তু না।কিন্তু ঐদিন রাতে আমার মনের মাঝে যা যা আসছিলো,দেরি না করে তাই লেখে ফেললাম।লেখা শেষে ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই আমি অবাক।কতটা সময় চলে গেলো,আমি টের পেলাম না! পরদিন সকালে ওই লেখাটির আমি আমার ফেসবুকের শেয়ার করি। শেয়ার শেষে ভাবতে লাগলাম,কি না কি লিখেছি।মানুষ যে কি বলবে।তবে এমনটা আর হলো না।আমার বন্ধুদের মাঝে সবাই ভালো হয়েছে বললো।কথাটা তেমন বিশ্বাসে আসেনি।কিন্তু আমার বাংলা শিক্ষকের চোখ ফাঁকি দেয় নি লেখাটি।তিনি লেখাটি পড়লেন।এবং আমার সাথে যখন স্যারের সাক্ষাত হয়।তখন তিনিই প্রথমেই বললেন।মুনাদ তুমি তো দেখি ভালোই লিখতে পারো! কথাটা শুনে আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম।স্যার আমায় বললেন লেখ, যা মনে চায় তাই লেখো।এটা দোষের কিছু না।ভালো দিক।শুনে খুবই আনন্দ হচ্ছিল নিজের মাঝে। বাসায় ফেরার পর ফেসবুকে লেখক সাদাত হোসাইন ভাইয়ার একটা ভিডিও আমার সামনে আসলো।যেখানে সাদাত হোসাইন ভাইয়া নিজের জীবনে লেখক হয়ে ওঠার পেছনে একটা কাহিনী শেয়ার করলেন।কিভাবে তিনি তার নিজের নাম টাকে ছাপার অক্ষরে দেখার জন্য পত্রিকার পৃষ্ঠা থেকে নামের অক্ষর গুলো কে আলাদা আলাদাভাবে সংগ্রহ করে, সেগুলো আঠা দিয়ে লাগিয়ে,তার নিজের নামের একটা রূপ দিয়ে ছিলেন। সাদাত হোসাইন ভাইয়ার সেই কাহিনী থেকে আমি অনেকটা সময় নিজেকে নিয়ে ভাবলাম।ভাবলাম নিজের জীবনটা নিয়ে। জীবন টা এত সহজ না।এখনে বড় হতে হলে কষ্ট আমাকে করতেই হবে।তাছাড়া সম্ভব না। এবং স্যারের কথাটা পর থেকে আমি নিজেকে বলতে লাগলাম।আচ্ছা মুনাদ, বলতো তুই কি সত্যিই ভালো লেখিস? যেটা তোর নিজের ও আগে জানা ছিল না। এরপর থেকে আমি প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি লিখতে শুরু করলাম। একটা লেখা লিখতে প্রচুর সময় চলে যেত আমার।এবং মাঝে মাঝে তিন চার ঘন্টা ধরে ৩০০ থেকে ৪০০ শব্দের একটা লেখা লিখে যখন ফেসবুকে শেয়ার করতাম,খুব হতাশ হতাম।আমার পোস্টে তেমন লাইক কমেন্ট পড়তো না। এমনভাবে কয়েকদিন হতাশ হলাম। আবার কয়েকদিন ভালোও লাগতো মানুষ আমার লেখা পড়ছে দেখে।আমি নিজে নিজেই তখন আবিষ্কার করতে লাগলাম নিজেকে।যে দিনের লেখার জন্য মন খারাপ হবে বা কেউ আমার পোস্ট গুলো যখন পড়বে না।তখন হতাশ হলে চলবে না আমাকে।কারণ এটা আমার শেখার বয়স।এখানে জয়ী হব,আবার হতাশ হবো এবং এই ছোট ছোট জয় গুলো দ্বারা একদিন হয়তো আসল জয়ে জয়ী হবো। দিন গড়াতে লাগল।আমিও লেখতে থাকলাম।আলহামদুলিল্লাহ! আমার লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটা মাসিক ম্যাগাজিনে।এমনকি আমি সাহস পেতে শুরু করি নিজের লেখা গুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার,মানুষকে জানানোর।এবং আমি দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও লেখা পাঠাতে শুরু করি। পত্রিকায় আমার লেখা মনোনীত হোক বা না হোক।তবে আমি হাল ছাড়িনি এবং ছাড়তে চাই না। আমি এখনো শিখছি।তাই এখন আমাকে হাল ছাড়া যাবেনা। হতাশ হওয়া চলবে না। কারণ,একটা ভালো ফলাফলের জন্য যে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম,এর প্রতি সাধনা আর অপেক্ষার।।একটু এবং আরেকটু অপেক্ষার...