অন্ধকারের আলো

হুমায়ূন কবীর রুস্তম

সাল ২০১৯, সবে মাত্র ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ । ভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভর্তি হইলাম কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তি না হতে পারার হতাশা আমার নীল শুভ্র আকাশে সৃষ্টি করলো "এক কালো মেঘ" । সারাক্ষন উদাসীন হয়ে থাকতাম, না ইচ্ছে ছিল কিছু করার , না ইচ্ছে ছিল মন খুলে হাসতে । বন্ধু , পরিবার সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলাম । সবার থেকে দুরত্ব বজায় রাখলাম । বলতে গেলে অরন্য থেকে শহরের খাঁচায় থাকা পাখির মতো । তফাত শুধু একটায় ও অনিচ্ছায় বন্দি আর আমি সেচ্ছায় । আর এই একাকিত্বকে পরিপূর্ণ করে তুলতেই হয়তো করোনার আবির্ভাব । দেশে শুরু হলো লকডাউন সারাক্ষন চার দেয়ালের মাঝেই দিন কাটালাম । প্রথম দিকে ভালো-ই লাগতো আম্মুর বকা খেয়ে বাহিরে যেতে হতো না , বন্ধুরাও ফোন দিয়ে আড্ডার জন্য জোর করতো না , কেউ বাসায় আসতো না , আমি যেন একটা স্বাধীন পৃথিবী পেয়ে গেলাম । কিন্তু এই স্বাধীনতা আমার জন্য শুভকর হলো না । একাকিত্ব আর বিষাদ আমায় প্রায় পাগলে পরিণত করতে লাগলো । আম্মুর অভিযোগে ছোট আপু ফোনে অনেক কিছু বুঝলো । আমিও বুঝলাম! ভাবতে লাগলাম সত্যিই আমি যা করছি তা ঠিক না এই হতাশার কালো চাদর থেকে আমাকে বের হতেই হবে । ছোট আপুর উপদেশে শুরু করলাম ফ্রীল্যান্সিং পাশাপাশি লেখা-লেখি আর উপন্যাসের বই পড়তে লাগলাম । উপন্যাস পড়তে আমার খুব ভাল লাগে আর লেখা-লেখিটা ছিল ছোট বেলার অভ্যাস । ভালো হোক আর খারাপ আমি লিখতেই থাকি । কিন্তু ফ্রীল্যান্সিং এই প্রথম । ইউটিউবে নানা রকম ভিডিও দেখে নিজের নামে একটি ফাইভার একাউন্ট খুলে নিজেই গিগ বানিয়ে আপলোড করলাম কিন্তু ৩ মাস পার হলেও কোন বায়ারের দেখা পেলাম না তখন খুব খারাপ লাগলো কিন্তু থেমে না গিয়ে ভুল গুলো শুধরে আবার নতুন নতুন গিগ আপলোড করলাম । কিছু দিনের মধ্যেই একটা বায়ারের কাজ পেলাম যদিও খুব সামান্য টাকার কাজ কিন্তু এটি আমার কাছে অনেক বেশি মূল্যবান ছিল । এর মধ্যে দিয়ে শুরু হলো আমার ফ্রীল্যান্সিং যাত্ৰা যা থেকে এখন ভালো টাকা উপার্জন হয় । অপরদিকে ২০২১ সালে হঠাৎ ফেসবুকে ''বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম'' নামের একটি গ্রূপ দেখতে পেলাম গ্রূপের ভেতরে গিয়ে দেখি তরুণদের অসামান্য সফলতা তারা পত্রিকায় লেখা-লেখি করে । আমার মন তখন আকাঙ্খায় ভোরে উঠলো ভাবলাম আমার ক্ষুদ্র প্রতিভা উন্মোচনের এটাই সুযোগ । পত্রিকায় আমার লেখা উঠাতেই হবে তারপর শুরু করলাম কলাম লেখা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি দ্বিতীয় বারের পাঠানো লেখাটি ২রা ডিসেম্বর ''দৈনিক ভোরের কাগজে'' প্রকাশিত হয় যা আমার কাছে সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল , খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম আর এর মাঝেই মনোবল বৃদ্ধি পেল চালিয়ে গেলাম লেখা-লেখি আর এখন নিয়মিত আমার লেখা প্রকাশিত হয় । যার ফলে নিজেকে আজ সফল মনে হয় , এ যেন মহামারীর প্রতিকূলে গাঁ ভাসানো এক বিজয় । সবথেকে বড় কথা , যে ভার্সিটির জন্য আমার জীবনে এক কালো অধ্যায় নেমে এসেছিল আজ আমি সেই ভার্সিটির একজন ছাত্র । এতকিছুর পরেও আমি স্বপ্নকে মুছে না ফেলে আঁকড়ে রেখেছিলাম যার জন্য আজ এই সফলতা । করোনা নামক এই ভয়ংকর মহামারীর মাঝে এই তিনটি সাফল্য আমার কাছে অন্ধকারে একটুকরো আলোর মতো ।