সুবত দাশ
বিজয় হরেকরকমের হয়। রংধনুর সাতরঙে রাঙিয়ে দেয় জীবনকে। আমার এ বিজয়ের গল্পটা জীবনের প্রয়োজনে।এটা বিজয় কিনা তা জানি না, তবে শিক্ষক হিসেবে নিজের কাছে কিছুটা হলেও সুখানুভূতির। ২০০২ সালের ঘটনা এটি। আমার কলেজের এক অতি দরিদ্র একটা ছাত্র ছিল। যার থাকা খাওয়া অন্যের বাড়ীতে প্রাইভেট পড়িয়ে চলত। থাকত আমার কলেজেরই একটি রুমে একাকী। ছেলেটা যতটা না সহজ সরল, তারচেয়ে বেশী বোকা ছিল। একদিন কলেজের পাশের বাড়ির একটি মেয়ে সন্ধ্যার পরে ওর কাছে পড়তে যায়। ও শতবার মানা করেও মেয়েটিকে বাড়ীতে পাঠাতে পারেনি। তারপর মেয়েটির পরিবারের লোকজন খুজতে এসে কলেজের রুমে পায়,সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায়। কিন্তু কে কার কথা শুনবে তখন। যতদোষ ঐ ছেলেটির ঘাড়ে পড়ল। পরের দিন কলেজে যেয়ে দেখলাম ওকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছ।ছেলেটি নিরুপায় হয়ে হাউমাউ করে কেঁদে চলেছে, দেখার কেউ নেই।আমি সাহস করে ওর সাথে কথা বলে সত্য ঘটনা জানার চেষ্টা করলাম। ও বললো আামাদের কোনো দোষ নেই। সবার সামনে দাঁড়িয়ে আমি একাই ছেলেটির দায়িত্ব নিলাম। প্রতিমাসে বেতন পেয়ে ওকে টাকা দিতাম। ও নিজেই যা পারতো রান্না করে খেতো।এইচ এস সি, অনার্স, এম এ পাশ করে আজ সে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। ঢাকাতে ফ্ল্যাট কিনেছে। সুখে আছে, সুখেই থাকবে, এই দোয়াই করি ছেলটার জন্য। সেদিন যদি ওকে সাহায্য না করতাম তাহলে ওর জীবন হয়তো অন্ধকারে ডুবে যেতো, আর শিক্ষক হিসেবে আমি নিজের কাছে নিজেই হেরে যেতাম। বিজয়ের মাসে এই ছোট্ট একটি বিজয়ের গল্প লিখতে পেরে আমি বড্ডই খুশি।