স্বপ্ন সে তো মায়ের বিজয় কিন্তু আমার

ঈষাদ সুলতানা

বিজয় মানেই তো স্বাধীন। কিন্তু নারীদের কি আসলে বিজয় আছে?আমরা নারীরা সবাই চাই বিজয়ী হতে কিন্তু তা কি আমরা আসলেই পারি? আমরা সবাই কিন্তু তা পারিনা কারণ আমরা নারী আমাদের তাই গৃহ থেকে শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসা মানা। মানা বলে কি আমরা বেরিয়ে আসবনা?কখন নয় আমরা বেরি আসব কিন্তু কিভাবে?অবশ্যই নিজেত যোগ্যতা দিয়ে,যেভাবে আমি আর মা বেরিয়ে এসেছি।আজ আপনাদের আমাদের শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসার গল্প বলব, তখন সময় ছিলো ২০০৮ যখন আমি ক্লাস ৫ পাশ করি,সব দিকে চলে সরকারি স্কুলের ভর্তি যুদ্ধ সবার মত আমার ও ইচ্ছে ছিলো সরকারি স্কুলে ভর্তি পরিক্ষা দিব কিন্তু আমি তা পারছিনা কেন জানেন আমার বাসার কাছে কোনো মেয়েদের সরকারি স্কুল ছিলোনা।আমি মেয়ে বলে দূরে কোথাও যেতে পারব না,তাই আমার ভালো স্কুলে পড়া মানা,তাই আমাকে ভর্তি হতে হলো বাসার পাশে এক বেসরকারি স্কুলে।তবে আমাদের বাসার পাশে সরকারি স্কুল ছিলো তা ছেলেদের জন্য।তাতে কি আর মেয়ে ভর্তি হতে পারে?পারেনা তাইনা?কিন্তু আমি মেয়ে হয়েও সেই স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি কারণ তারপরের বছর থেকে ওই স্কুলে মেয়েদেরব ভর্তি করাতে পারবে।আমি তো মহাখুশি দূরে না হোক কাছের ভালো স্কুলে তো ভর্তি হতে পারব কিন্তু জানেন তাতেও আমার বাধা কারণ ওটা ছেলের স্কুল,মেয়ে ওখানে গেলে খারাপ হয়ে যাবে,যাতে আছে তাতেই ঠিক আছে।কিন্তু এইবার আমি আর হার মানার নয়,আমি এর শেষ দেখব।ফ্যামিলিতে ১ বছর অনেক বুঝালাম।আমার সাথে সাথে আম্মুও অনেক বুঝালো কিন্তু বাবা বুঝার ই নয়।পরিক্ষা বাকি আর ১৫ দিন।ঈদের ছুটিতে ছিলাম তখন গ্রামে।কোনো ভাবে আসতে পারছিনা।পরিক্ষার ১৫ দিন আগে এসে বাবা কে আবার বলি আমি পরিক্ষা দিতে চাই।এই পর্যায়ে বাবা বলে তোমাদের যা খুশি কর আমি এইসবে নেই।তারপর আমার এত আগ্রহ দেখে মা একপাশের বাসার আন্টির সাথে একটা স্যারের কাছে যান যিনি ভর্তি পরিক্ষার কোচিং করান।তখন বাকি ছিলো আর ১০ দিন ওনি ভর্তি করাতে চাইনি।মা,আন্টি রীতিমত বুঝিয়ে আমাকে ভর্তি করায় ওই কোচিং এ তখন ছিলো অনেক শীত এই শীতের দিনে মা আমাকে প্রতিটা দিন সকাল ৬টাই ঘুম থেকে উঠিয়ে ৬.৩০ এ নিয়ে বেরিয়ে যেতো কোচিং এর উদ্দেশ্যে কারণ কোচিং ছিলো ৭ টায়।আমাকে দিয়ে মা বাসায় আসতো আবার ১০ টায় যেতো আমাকে নিয়ে আসতে।আমি প্রতিটা দিন চিন্তা করতাম মায়ের এই কষ্ট,স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারব তো? এইভাবে চলে আসে আমার পরিক্ষা।এই ৯দিনে আমার থেকেও বেশি কষ্ট করেছেন আমার মা।পরিক্ষা দিলাম মোটামুটি হলো পরিক্ষা।বাসায় এসে খুব খারাপ লাগছে মায়ের জন্য আমি কি পারব তার স্বপ্ন পূরণ করতে?এইভেবে দিন গেলো।ঠিক ১২ টায় ফোন আসে স্যারের আমি স্কুলে ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।মা আমাকে ডেকে বলে আর খুশিতে কান্না করে দেয়।তা দেখে আমি ও কান্না করে দিই।কারণ আমার মায়ের কষ্ট আর স্বপ্ন দুইটা ই মূল্য আমি দিতে পেরেছি। সেই দিন আমি আর মা বিজয় হয়েছি।সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছি,মেয়ে হলেও শিকল ভাঙতে পারে শুধু দরকার ইচ্ছে শক্তি আর সাহস।সেই দিন বাবা ও অনেক খুশি আমাদের খুশি দেখে।বাবা ভুল ধারণা ও চলে যায়।আর বাবা নিজে গিয়ে আমাকে স্কুলে ভর্তি করায়। একটু কষ্টতে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মায়ের আর বিজয় হয়েছি আমি। ঈষাদ সুলতানা অনার্স ৪র্থ বর্ষ,অর্থনীতি বিভাগ। চট্টগ্রাম কলেজ।