Fairose Afrin Moon
আমার জীবনে আমি যাকে নিজের ক্যারিয়ার গঠনে আইডল মনে করি, সে হলো আমার বড় বোন। যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। আমার বড় বোন একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। ২০১০ সালে ও ২০১২ সালে সে SSC এবং HSC পরীক্ষায় GPA 5 পেয়েছিল। তারপর তখনকার BUET এ নিয়ম ছিল যে, ইংরেজি বিষয়ে A+ পেতে হবে,যা তার ছিল না। সে কারণে BUET এ তার পরীক্ষা দেয়াই হলো না। অথচ আজকের দিনেBUET এর এমন কোন নিয়ম নেই। তারপর সরকারি মেডিকেলে চান্স না পেয়ে বাধ্য হয়ে পড়তে হয় সিরাজগঞ্জে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে, বাবার ইচ্ছাতে। সেখানে ও তাকে অনেক চড়াই উৎরাই পার করতে হয়। যদিও তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। সে দেরিতে ভর্তি হয়েছিল বলে রোল নাম্বার হয় শেষের দিকে। প্রতিটি মৌখিক পরীক্ষায় এবং বার্ষিক পরীক্ষায় সে অনেক ভালো লিখতো এবং উত্তর দিতে পারতো। কিন্তু তারপরও তাকে পাশ করানো হতো না। কারণ তার রোল ছিল শেষে। এমনকি তাকে প্রফেসররা বলত, "ভালো শিখেছো তুমি। কিন্তু আমাদের নিয়মের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়"। আমার প্রশ্ন হল, এটা কোন ধরনের নিয়ম? অবশেষে সে একদিন ডাক্তার হলো। তারপর সেই হসপিটালে জয়েন করার পর আরো এক যুদ্ধ শুরু হলো। জুনিয়র ডাক্তার বলে সিনিয়ররা তাকে ভুল না হলেও অপমান করত। সারা দিনরাত অনেক পরিশ্রম করতে হয় তাকে। একবার একটি ক্রিটিক্যাল অপারেশন করে ৩টি জমজ সন্তানকে সে পৃথিবীর আলো দেখায়, যাদের বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না। তখন সিনিয়র ডাক্তাররা তাকে সাধুবাদ জানান। অবশেষে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আজ সে পটুয়াখালীর একটি হাসপাতালে গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছে। আজকের দিনে আমরা হয়তো কোন ভুল হলেই ডাক্তারকে দায়ী করি। তাদের কটুক্তি করে নিজেদের সান্ত্বনা দেই। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি যে, তাকে এই জায়গায় আসতে কত লড়াই করতে হয়েছে। তার জীবনগল্প তো কেউ কোনদিন জানতেও চায় না।