Sufiya Islam
দিনটি ছিলো ১৬ ডিসেম্বর। তখন আমার মেয়ে ৫ম শ্রেনীতে পড়তো।১৭ তারিখ থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দিবে।মেয়ে বিজয় দিবসে বায়না ধরলো শহীদ মিনারে চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করতে যাবে।আমার তো শুনে মাথায় হাত।আগামীকাল বৃত্তি পরীক্ষা আর সে নাকি আজ যাবে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে।নিষেধ করেও লাভ হলোনা।কারন ছবি আঁকা,গান এসবের প্রতি তার অন্যরকম আকর্ষন কাজ করে।তাই আর তাকেও আটকে রাখতে পারলাম না।কিন্তু মনে ভয় আগামীকালের পরীক্ষায় না জানি কি করে।মেয়ে ঘন্টা দুয়েক বাদে হাত ভর্তি উপহার নিয়ে হাজির।সে চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার জলরং ও ফেবার ক্যাস্টেল উভয় বিভাগে প্রথম হয়েছে।খুশি মনে জিজ্ঞেস করছিলো "আম্মু খুশি হওনি?" আমি বলি খুশি হয়েছি তবে আগামীকালের পরীক্ষায় ভালো করে আমাকে আরো খুশি করাও।তখন মেয়ে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো "চিন্তা করোনা তুমি চাইলে আমি ভালো করবোই"।যথারীতি বৃত্তি পরীক্ষা দিলো।কয়েকমাস পর ফলাফল বেরোলো আমার মেয়ে প্রাথমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।আমার যে কি আনন্দ হচ্ছিলো তা আমিই জানি।আমার মেয়ে বলে "তুমি আমাকে বিজয় দিবসে আমার চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় যাবার সুযোগ করে দিয়েছিলে,আমি বিজয়ী হয়েছিলাম, আর সে জন্য আজ তোমাকে খুশি করেছি আম্মু।আমার মেয়ে আমাকে বলেছিলো "তুমি আমার জন্য কত্ত কষ্ট করো,রাত জেগে পড়াশোনা করাও,পাশে বসে থাকো।তোমার এ কষ্ট গুলাকে তো বৃথা যেতে দেয়া যাবে না।আমার এ প্রাপ্তি গুলাই তোমার বিজয়।তখন আমার আনন্দে চোখে পানি এসে যায়।সত্যিই মেয়ের বিজয় তো আমার বিজয়।আর মেয়ের পাশে সবসময় থাকি জন্য অনেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল্য করে।তাই মেয়ের বিজয় এসবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।মেয়ে নিজে ভালো রেজাল্ট করে আমাকে বিজয়ী করেছে।তার অন্য অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।কিন্তু বিনিময়ে আমি বিজয়ী।