মোঃ আসাদুজ্জামান
পরাধীনতাকে জয় আর দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসার টানে এদেশের লক্ষ লক্ষ বীর যোদ্ধা, বাবা-মা, ভাই-বোন সকলের সাহসী সংগ্রাম আর জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। অন্তরের গভীর থেকে তাদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাই আজীবন। স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে স্বাধীনভাবে বড় করে উঠার পিছনেও রয়েছে অসংখ্য যোদ্ধাদের ত্যাগ আর ভালোবাসা। নিজের লেখাপড়া ত্যাগ করে, জীবনের সকল সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে, সারাদিন পরিশ্রম করে অন্যের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলেন এই রকম যোদ্ধা পৃথিবীতে খুব কমই আছে। ঠিক এই রকম একজন সাহসী বিজয়ী যোদ্ধা হচ্ছেন আমার বড় ভাই। আমার বড় ভাই, আমার বাবার মত। আমরা চার ভাই। ভাইয়া যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়েন ঠিক তখন বাবা মারা যান। ভাইয়া ক্লাসের দ্বিতীয় বয় এবং খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। বাবা হঠাৎ করে মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরার আর কেউ ছিল না। ছোট ছোট তিন ভাই আর মায়ের মুখে দিকে তাকিয়ে বড় ভাই নিজ দায়িত্বে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাবার ব্যবসার কাজে যোগদেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ভাইয়া নেমে পড়লেন জীবন যুদ্ধের সংগ্রামে। মায়ের মুখে হাসি আর ছোট ভাইদের একটু সুখের জন্য সূর্য উঠার পর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। আমাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার দরকার তার কোনটাই বাদ দেননি তিনি। তার আদর-মমতা, ভালবাসা আমাদেরকে কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই তার ছোট ৩টি ভাই আজকে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে সবাই খুব ভাল অবস্থানে পৌছে গেছে। ছোট ভাইদের সাফল্যে বড় ভাই আজকে মহাখুশী ও আনন্দিত। আমি স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু আমার বড় ভাইয়ের জীবন যুদ্ধ দেখেছি। তিনি কত পরিশ্রম করে আর কত ত্যাগ আমাদের জন্য সহ্য করেছেন। বড় ভাই যদি আমাদের দায়িত্ব না নিতেন তাহলে হয়তো আজকে আমার এই গল্প লেখা হতো না এমনকি আমি ঠিক মতো পড়তেও পারতাম না। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের বড় ভাইকে সুস্থ রাখেন ও দীর্ঘ আয়ু দান করেন যাতে করে বড় ভাইকে আমাদের মাঝে সব সময় সাথে পাই।