আফসানা মীম
আফসানা মীম করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ করে একদিন আমার বাবার গায়ে খুব জ্বর আসলো । আমরা ভেবেছিলাম এটা সাধারণ জ্বর । বেশ কয়েকদিন কেটে গেল , কিন্তু বাবার জ্বর কমছে না । তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । ডাক্তার বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করে বলছিলেন, ডেঙ্গু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে ডাক্তার করোনা টেস্টও করতে বলেছিলেন । করোনা টেস্ট এর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিলো । তারপরই শুরু হয়েছিল যুদ্ধ । আমরা কেউই বাসা থেকে বের হতাম না , যেহেতু আমার বাবার করোনা পজিটিভ । এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমার মা , আমার বাবার কাছে ছিলেন । তার সেবা- যত্ন করতেন। আমার একটি বড় ভাই আছে । আমাকে আর আমার ভাইকে মা বলেছিলেন, আলাদা থাকতে , কারণ আমরা ছোট । তারপরও আমরা আলাদা থাকতে চাইনি । কিন্তু মা অনেক অনুরোধ করেছিলেন, আমাদের আলাদা থাকতে , কারণ বাবার পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল । তারপর আমি আর আমার ভাই সামনের রুমে থাকতাম, দুইজন আলাদা - আলাদা । আর আমার মা- বাবা থাকতো ভিতরের রুমে । করোনা ভাইরাস যেহেতু বাতাসের সাথে ছড়ায়, তাই আমরা ভিতরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতাম । কিন্তু আমার ভিতরেও করোনার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল, যেমন নাকে ঘ্রাণ পেতাম না । অবশ্য সেটা কিছুদিন পর ঠিক হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু আমার বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে লাগলো । সবাই বলেছিলো যে , আমার বাবাকে আর বাচানোর সম্ভাবনা নেই । কিন্তু এই ব্যাপারে আমার মা , আমাদেরকে আগে কিছু বলে নাই । কারণ আমরা কান্না করবো । আমার বাবার ট্রিটমেন্ট হয়েছিল বাসায় । বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে , দীর্ঘ এক মাস পর আমার বাবা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন । আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাবাকে আবারও করোনা টেস্ট করিয়েছিলাম এবং রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিলো । এই যুদ্ধে আমরা সবাই বাবার পাশে ছিলাম । কেউই বাবাকে ছেড়ে যাইনি । সবচেয়ে বড় কথা, বাবাকে আবার আমাদের মাঝে ফিরে পেয়েছি । এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিজয় ।