লড়াই

ফরিদা আখতার মায়া

কালো বিড়াল ফরিদা আখ্তার মায়া মিথিলা কালো বিড়াল, কালো বিড়াল বলে চিৎকার করে। মানুষ দেখলে কাঁথায় মুখ লুকায়। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা। গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করে।বয়সের তুলনায় বাড়ন্ত।নাদুস নুদুস শরীর।চোখ দুটো টানা টানা। মাথায় কোঁকড়া চুল।হাসলে গালে টোল পড়ে। লেখাপড়ায় খুব ভালো।ক্লাসে বরাবর প্রথম হয়।খেলাধূলায় পারদর্শী। নাচ গান অভিনয় সব কিছুতেই সেরা।দূরন্ত চঞ্চল চপলা। সারা গ্রাম চষে বেড়ায়।গ্রামের সবার খুব আদরের। বড়দের সম্মান করতো।বুড়োদের জল তুলে দেয়া, রাস্তা পারাপারে সাহায্য করা তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। বাবা মুদির দোকানী। মা এনজিও তে চাকুরী করে।এক বোন এক ভাই।মিথিলা বড়। ছোট ভাই মোহন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ছোট ভাইকে খাওয়ানো, গোসল করানো সব ও ই করে থাকে।বিকালে ভাইয়ের সাথে মাঠে খেলতে যায়।খেলা শেষে সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়তে যায়। ফাল্গুনী মিথিলার বান্ধবী।একই ক্লাসে পড়ে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দুজন এক সাথে স্কুলে যায়। খেলাধূলা করে।দুজন হরিহর আত্মা। মিথিলার স্কুলের পথে একটি বট গাছ।পথিক বটের ছায়ায় ঝিরিয়ে নেয়।চাষীরা বট তলায় খাবার খায়। নানা রকম পাখি বট গাছে বসে।কিচির মিচির শুনতে ভালো লাগে। গভীর রাতে বট তলা দিয়ে একাকী কেউ হাটেনা।শোনা যায় একাকী হাটলে নাকি ভুতের গান শুনতে পাওয়া যায়। কদিন ধরে বটতলায় দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে।মিথিলা ফাল্গুনী স্কুলে যাবার সময় নানা রকম বাজে কথা বলে।এদের একজন রবিন গ্রামের মেম্বারের বখাটে ছেলে।গাঁজারনেশায় বুঁদ হয়ে থাকে।সকল কূকর্মের হোতএা।অপর জন ওর বন্ধু। আজ স্কুলের পথে মিথিলার পথ আগলে দাঁড়ায়।ওর হাত ধরতে য়ায়।কুপ্রস্তাব দেয়।চিৎকার দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়।রবিনের মুখে থু থু ছিটিয়ে দেয়। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে এসে বাবাকে সব বলে। বাবা রাগে ক্ষোভে অগ্নিশর্মা হয়ে পশ্চিম পাড়ায় মেম্বারের বাড়ি যায়।মেম্বার তার ছেলের নামে অপবাদ দিয়েছে বলে তাড়িয়ে দেয়। একমাস পর ফাল্গুনীর খালাতো বোনের গায়ে হলুদ।মিথিলার মাকে বলে নিয়ে যায়। মিথিলা ঘুনাক্ষরে ও বুঝতে পারেনি ফাল্গুনী রবিনের সাথে হাত মিলিয়েছে।অন্ধকারে বটতলা দিয়ে যাচ্ছিল।হটাৎ গাছ থেকে মুখোশ পরা প্রাণী তার উপর লাফিয়ে পড়ে ঝাপটে ধরে সর্বস্ব লুটে নেয়। নখের আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত করে। মিথিলা ফাল্গুনী ফাল্গুনী বলে চিৎকার করে। ফাল্গুনী খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। মিথিলা জ্ঞান হারায়।ওরা মৃত ভেবে ফেলে যায়।গোঙ্গানীর শব্দ শুনে গভীর রাতে পথচারী পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়।সেই থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন মিথিলাকে নিয়ে শুরু হয় মা বাবার যুদ্ধ।তারা তাকে কোন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে তাকে নিজেদের কাছে রেখে সেবা যত্ন করতে থাকে।মা বাবার সঙ্গ পেয়ে সে আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে।পুরোপুরি সুস্থ হলে তাকে আবার স্কুলে ভর্তি করে।মিথিলা সকল ভয়কে জয় করে এগিয়ে যেতে থাকে। এক সময় মিথিলা লেখাপড়া শেষ করে বি সি এস পাস করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চাকুরী লাভ করে।নিজের উপজেলায় জেলাপ্রশাসক হয়ে সকল অপকর্ম প্রতিরোধ করে।নারী শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ সরকার জেলাকে মাদক,দূর্নীতি, বাল্যবিবাহমুক্ত মডেল জেলা ঘোষণা করে।আর মিথিলা জয়ীতার মুকুট পায়। *জীবন মানে যুদ্ধ ক্ষেত্র,এখানে ঝড় ঝাপটা আসতেই পারে তবে তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে। ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। ফরিদা আখতার মায়া