রুবি হিজড়া
কেবল লৈঙ্গিক ভিন্নতার কারণে আপনার-আমার অবহেলা ও বৈষম্যপূর্ণ আচরণের শিকার হয়ে যাঁদের রাস্তাঘাটে হাত পাততে হয়, আমরা তাঁদের হিজড়া বলে চিনি। এই মহামারির মধ্যে কেমন আছেন তাঁরা? কীভাবে দিন কাটছে তাঁদের? আমার–আপনার সাহায্যের টাকায় যাঁরা ‘দিন আনি দিন খাই’ ভিত্তিতে চলেন, গত মাসগুলো কীভাবে তাঁদের পেট চলেছে? হিজড়াদের ঐতিহ্য চাঁদা তোলা। নববিবাহিত দম্পতি অথবা সদ্যোজাত শিশুর বাড়িতে গিয়ে আশীর্বাদের সূত্রে তাঁরা অর্থ চান। এ ছাড়া তাঁরা বাজারে গিয়ে দোকান থেকে নগদ অর্থসাহায্য প্রার্থনা করে থাকেন। অনেক সময় এ নিয়ে ব্যবসায়ী বা গৃহস্থের সঙ্গে তাঁদের বাদানুবাদও হয়। তবে এসব এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। হিজড়াদের একটি বড় অংশ যৌনবৃত্তিতে সম্পৃক্ত। লকডাউনের কারণে উপার্জনের সে রাস্তাও বন্ধ ছিলো। হিজড়াদের অপর একটি অংশ, যাদের কোতি বলা হয়ে থাকে, তারা সাধারণত হিজড়াদের ঐতিহ্যগত পেশায় অংশ না নিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের পরিবার থেকে পরিত্যাজ্য, পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ নেই। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁরা টিউশনি করেন অথবা নাচগান করেন অথবা যৌন ব্যবসার মাধ্যমে তাঁদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাঁরা যেহেতু হিজড়াদের মতো চাঁদাকেন্দ্রিক পেশায় নিয়োজিত নন, তাঁরা যেহেতু রূপান্তরকামী, তাঁদের নাজুকতা আরও বেশি। সে নাজুকতা মুহূর্তে তাদের পাশে দূত সেবক হয়ে দাড়ায় মনিষা মীম নিপুণ হিজড়া ও পথচলা ফাউন্ডেশন। মনিষা মীম নিপুণ হিজড়া তার নিজস্ব সংগঠন পথচলা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করোনা মহামারীকালিন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে সরকারি, এনজিও, টিভি চ্যানেল, ফেসবুক গ্রুপ ও যুব সংগঠন হতে সাহায্য নিয়ে চট্টগ্রামের শহর ও গ্রাম অঞ্চলে ১১১২ জন হিজড়ার পাশে দাড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন হিজড়ারাও চাইলেও নেতৃত্ব চর্চা করতে পারে।। স্বেচ্ছাসেবক মনিষা হিজড়া অন্যান্য সেক্টরেও উল্লেখ্য যোগ্য অবদান রাখেন। তা হল: সেভ দ্য চিলড্রেন ও ম্যান অ্যান গেজ অ্যালায়েন্স অন্তর্ভুক্ত যৌন প্রজনন ও স্বাস্থ্য অধিকার ও বাল্য বিবাহ বন্ধ বিষয়ক অ্যাডভোকেসি সভায় ২২০ জন চ্যান্জ ম্যাকারদের সাথে মাষ্টার ফ্যাসিলিটিটের হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জন হিজড়াকে ১০০ ভাগ বৃত্তিতে ভর্তি ও ১০ জনকে ফুড পান্ডায় চাকুরী দিয়েছেন। তিনি ১০০ জন হিজড়া ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা করেছেন। তাছাড়া, বিওয়াইএলসি ইয়ুথ সামিট ২০২১ "আমি থেকে আমরা" ইভেন্ট ১০ জন লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিদের সহ হিজড়া ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর হয়ে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবসময় হিজড়া ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য যোগাযোগ দক্ষতা সৃষ্টি করছেন।