আত্মহত্যার এক মিনিট আগে

Mahmudul Hasan Niaz

পৃথিবীটা আসলাম, বাঁচলাম, জয় করলাম এমন ধাচের হলে খুব ভালো হতো। কিন্তু আমাদের বেশিরভাগ মানুষের জন্য জীবনটা এমন না আর এমন না হবার মূল কারণ হয়তো প্রত্যাশা। প্রত্যাশিত যেকোনো কিছু কিংবা বেঁচে থাকার যেকোনো অবলম্বন একবার সরে গেলে তা ফিরিয়ে আনতে ঠিক কতটা সময় লাগে সে ব্যাপারে বিজ্ঞান কিংবা দর্শনের কোনো তথ্য এই বিশ্বব্যাপী হয়তো নাই। এসব হযবরল বাদ দিয়ে যদি দুটো গল্প বলা যায় কেমন হয়? আত্মহত্যা সবসময় আমাদের এই সমাজে দুটো দিক পায়। ১/সিম্প্যাথি : খুব অদ্ভুত একটা জেনারেশনে আমরা বসবাস করছি। এ জীবনে হয়তো এই পৃথিবী আমাদের একটা উৎকট যন্ত্রে পরিণত করছে, হাসি-কান্না, ভালোবাসা এই সবকিছুকে যেমন একটা নিরেট বাক্সে আটকে দিয়েছে, তবু এ জীবন অমূল্য। খুব সন্নিকটের ঘটনা, একজন ছাদের রেলিং বেয়ে আর্টসেলের গান ছেড়ে জীবন দিয়ে ফেললো। একটা জীবন কি এতই সস্তা? আর এ পৃথিবী ছেড়ে যে নীরব প্রতিবাদ মানুষ করতে চায় তা কি আদৌও মূল্য আছে? মৃত্যুর পরে ভালোবাসা কিংবা সিম্প্যাথি তার কোনো কিছুই যদি দেখতে না পারে তবে তার মূল্য কি? ২/ ভিক্টিম ব্লেমিং : খুব টিপিক্যাল একটা কথা শোনা যায়। ধরেন কেউ আত্মহত্যা করলো। হোক কোনো কষ্ট কিংবা সামাজিক চাপ, কোনো এক জানা কিংবা অজানা কারণ। আশেপাশে সবাই বলে উঠে "আরে পরিবারের কথা চিন্তা করলো না, প্রিয়জনের কথা চিন্তা করলো না "। মৃত্যুর পরে আপনার তাকে দেয়া দোষ কিংবা এই অযথা বকবকানি কোনো কিছুই তাকে ছেয়ে যাবেনা। এ পৃথিবীর প্রতি, চারপাশের মানুষের প্রতি কতটা কষ্ট, কতটা অবিশ্বাস নিয়ে সে পৃথিবীটা ছেড়ে গেছে তার খোঁজ না রেখে মৃত মানুষকে নিয়ে সমালোচনা না করাই মঙ্গলবার বৈকি। হিউম্যান সাইকোলজি খুব জটিল ধাঁচের কোনো স্পন্দন। আর তাই কাউকে দোষ দেই বা না দেই, এই পৃথিবীটা সুন্দর হোক। সকলে তার প্রিয়জনের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিক প্রতিটা মুহূর্তে। আমার যেই বন্ধুটা দড়িতে ঝুলে ফাঁস দিয়ে এই পৃথিবীটা ছেড়ে চলে গেলো, খুব জানতে ইচ্ছে করে মৃত্যুর এক মিনিট আগে সে কি ভাবছিলো, হয়তো তা জানলে আজকে সে আমাদের মাঝেই থেকে যেতো, হয়তো তা আত্মহত্যার এক মিনিট আগে চাপানো কোনো ক্ষোভের অগ্নিঝরা হয়ে আমাকে পুঁড়িয়ে মারতো চিরকাল। ভালো থাকুক প্রিয় মানুষ, প্রিয় পৃথিবী। বিজয় হোক ভালো থাকার।