জীবন আকাশে মেঘ

অঞ্জন রায় কৃষ্ণ

গল্প জীবন আকাশে মেঘ অঞ্জন রায় কৃষ্ণ প্রিয়ারা এক  ভাই এক বোন।প্রিয়া বড়।ভাই ছোট।ছোট ভাই ক্লাস টেনে পড়ে।প্রিয়া সদ্য ইন্টার পাস করেছে।কলেজে ভর্তির জন্য অপেক্ষা...। বাবা মারা গিয়েছে ছোট বেলায়।তখন ক্লাস ফাইভে পড়ত।আপছা আপছা মনে আছে।সেদিন বাবা মারা যায় ঘন বৃষ্টির রাতে।বাড়িতে মা আর ছোট ভাই ছাড়া আরত কেউ ছিলনা।পাড়া প্রতিবেশি কাকা জ্যাঠা ছিল।কিন্তু কেউ ঐ রাতে এগিয়ে আসেনি বলা যায়।যদিও ওনারা টের পেয়েছে অনেক পরে। গরীব হওয়াতে সম্পর্ক রাখতো না কেউ।যদি সাহায্য করা লাগে। বৃষ্টির মধ্যে সারা রাত ধরে বাবার লাশের পাশে বসে ছিল।কখন বৃষ্টি থামবে আর কখন বাবার সৎ কার্য্য সম্পাদন করবে। বাবার মৃত্যুতে প্রিয়া ভিষন ভেংগে পড়েছিল।কে সংসারের হাল ধরবে।ভাই কে মানুষ করবে কে।মার ঔষধের টাকা জোগার করবে কোথা থেকে।সাত পাঁচ ভেবে সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। পরদিন সকালে বাবার সৎ কার্য্য সম্পাদন করলো অনেক কষ্টে।হাতে টাকা পয়সা ছিলনা।প্রিয়ার জন্য প্রিয়ার মা হালকা ওজনের একটা সোনার বালা রেখেছিল সেটা বিক্রি করে দিল।যেটা প্রিয়ার মাকে বিয়ের সময় তার দাদু দিয়েছিল। আজ সেটা বিক্রি করতে বাধ্য হলো।সম্পদ কাজে লাগে বিপদের সময় আজ বুজতে পারল গভীর ভাবে।টাকার জন্য হয়ত বাবার দেহ টাকে আজ পুড়াতে পেরেছে। আত্নার শান্তি হবে এটাই শান্তনা তাদের কাছে। মার বালা হয়ত আর ফিরে আসবেনা,কিন্তু বাবা তো আর ফিরে আসবে না। প্রিয়ার কলেজে ভর্তির তারিখ দিয়েছে।সব মিলে আটার শো টাকার মত লাগবে।চিন্তায় পড়ে যায় এত টাকা কোথায় পাবে।একবার তো মার বালা বিক্রি করেছে এখন কি বিক্রি করবে। পাশে মামা বাড়ি।মামাদের অবস্থা ও তেমন ভাল না।তার মধ্যে সেঝ মামাটা একটু স্বচ্ছল।কোন রকমে খেয়ে পড়ে ভাল আছে।সেঝ মামার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভর্তি হয়। কমার্স  বিভাগে।জীবনের শুরু থেকেই বাধাঁ পার হতে হচ্ছে।জানে না কতদিন এই বাধাঁর মধ্যে থাকতে হবে। মার শরীর খারাপ।ঔষধ ফুরিয়ে গেছে। আজ শরীর টা ভিষন খারাপ।জীবন সঙ্গীঁনির চলে যাওয়াতে আরো ভেংগে পরেছে।মনে হয় আর বেশি দিন আয়ূ নেই। ভাইয়ের পড়াশোনাটা ও ধীর গতিতে চলছে।সারাক্ষন মন মরা থাকে।বুঝতে পারছে সংসারের বেহাল অবস্থা।কি করবে।বয়স কম।লেখা পড়ায় মন বসাতে পারেনা। বাবা নেই।দিদি র জন্য মন বড় খারাপ লাগে।একা একা দিদি কত আর ভাববে। ভিষন দুঃষ্চিন্তায়  পরে যায়। এখন পড়া শোনা ছেড়ে দিবে চিন্তা করে।দিদি কে বলবে দিদি আমি আর পড়াশোনা করব না। ভাবা মাত্রই প্রিয়াকে বলে, দিদি আমি তোকে একটা কথা বলব। প্রিয়াঃকি কথা বল? ভৈরব থতমত খেয়ে বলে,দিদি আমি আর পড়াশোনা করব না।কাজে লেগে যাব।সংসার তো অচল হয়ে যাচ্ছে।একা তুই আর কত করবি। প্রিয়ার মাথায় রাগ ওঠে।একটা থাপ্পর মারে।তারপর বলে,খুব বড় হয়ে গিছিস না;।খুব বুঝতে শিখে গেছিস।আমি এখনো মরিনি বুজলি।যেদিন আমি মরে যাব সেদিন যা কিছু করিস আমি দেখতে যাব না। ভৈরব চোখ মূছতে মূছতে বলে,ভূল হয়ে গেছে দিদি।আমি আর তোর কষ্ট দেখতে পাচ্ছি না। প্রিয়া গায়ে স্নেহ মাখা হাত খানা বুলিয়ে বলে, যা তোর অত কিছু ভাবা লাগবে না।সব আমি দেখব। ঠিক আছে দিদি। প্রিয়ার মার শরীর টা আজ আবার খারাপ হয়ে পরেছে।জীবন টা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। প্রিয়া টিউশনি করতে শুরু করলো।পড়াশোনার পাশাপাশি।দিন রাত খেটে যাচ্ছে সংসারের জন্য।কি হবে জানেনা।শুধু জানে সংসার কে হারতে দেওয়া যাবেনা। এত অভাবের মধ্যে আবার হৃদয় নামে একজন প্রিয়াকে পছন্দ করে।প্রিয়া প্রথমে অমত করলে ও নিজের জাগ্রত প্রেমিকা ভাবসম্পন্ন মনের কাছে পরাজিত হয়ে সাড়া দেয়। হৃদয় বড় লোকের ছেলে।এম এ পাস। দু,জনের ভালবাসা বেশ গভীরে চলে গিয়েছে। হৃদয় এক দিন প্রিয়াকে ডেকে নেয়,তারপর বলে,প্রিয়া আমি স্কলারশীপ নিয়ে ইংলান্ডে যাচ্ছি।প্রিয়ার কথাটা শুনে চোখ চড়ঁক গাছে উঠে।এতদিন একটা অস্থায়ী আশ্রয় হলেও  অন্তত নিরাপত্তা ছিলো। দুঃখকে ভাগ নেওয়ার একজন মানুষ ছিল।আজ তাও শেষ হতে চলেছে। প্রিয়াঃ আসলে এত বড় একটা খুশির সংবাদে আমি খুশি হলেও মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।এতদিন তুমি আমাকে নিরাপত্তার চাদরে আগলে রেখেছিলে।নিজেকে কখনো একা মনে করিনি।ভেবেছি কেউ একজন আছে আমাকে ভালবাসার বন্ধ দুয়ার দিয়ে আটকিয়ে রাখার।আজ সে দরজা ও খোলা থাকবে। হয়ত সময়ের কাছে সে দরজা অন্য কেউ খোলার চেষ্টা করবে।জানিনা কতক্ষন আমি সে দরজা আমি বন্ধ রাখতে পারব। তবে তুমি বিদেশি মেম পেয়ে আমাকে ভূলে যাবে।তখন আমার কি হবে। আমি কার কাছে আশ্রয় খুজবো হৃদয়। হৃদয়ঃ না প্রিয়া তুমি এমন করে ভেবো না।আমি তো ডিগ্রি নিয়েই চলে আসব যত দ্রুত সম্ভব।তুমি শুধু আমার উপর ভরসা রেখো।আমি তোমার আছি তোমারই থাকব। তোমাকে রেখে যেতে আমার কি কম কষ্ট হবে বলো।আমি যে তোমার মধ্যে সত্যিকারের একজন আত্নবিশ্বাসী প্রিয়াকে দেখতে পেয়েছি।যার কাছে নিজেকে অনায়াসে সমার্পন করা যায়।যাকে ভালবাসা যায়। যার সাথে সারা টা জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়। তোমাকে হারাবো বলে  আমি ভালবাসিনি সোনা।তোমাকে আজীবন নিজের সাথে ভালবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখব বলে ভালবেসেছি।সোহাগে আদরে রেখেছি তোমারে, এ বাধঁন যাবেনা ছিড়ে। তুমি নও কোন কল্পনা তুমি এ হৃদয়ের স্থায়ী বাসিন্দা। হাত ছুয়ে বলো তুমি আমার আছো চিরদিন, ঐ আকাশে সূর্য আছে যতদিন।। প্রিয়া এই আমার হাত দিলাম তুমি শফত করে বলো,আজীবন আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে। প্রিয়া আস্তে করে হৃদয়ের হাতে হাত রাখে আর বলে আমি তোমার থাকব। আমি কথা দিলাম আমি কথা দিলাম তুমি আমি যুগে যুগে থাকব সাথে যুগে যুগে থাকব সাথে।। আমি কথা দিলাম। চাঁর চোখ থেকে বিদায়ের অশ্রু ঝড়ে পড়ছে। এ বন্ধনের স্বাক্ষী হয়ে থাকল নীল আকাশ।সবুজ গাছ।আর অদৃশ্য দুটি হৃদয়। শৈশবের ফেলে আসা জীবন টা ভেবে প্রিয়া এখন কাদেঁ।ওদের বিয়ে হয়েছিলো না।দুজনের জীবন দুদিকে মোড় নিয়েছিলো। হৃদয় আর দেশে আসেনি।এভাবেই শৈশব কালের ভালবাসা পরাজয় বরন করেছিলো পরিস্থিতির কাছে।ভালবাসা ভালবাসা থাকো তুমি দূরে....! প্রিয়া আজ ভালবাসার কাছে হেরে গিয়েছে জীবনের কাছে হারেনি।প্রিয়ারা কখনো হারে না।ওরা বেঁচে থাকে স্বপ্ন নিয়ে।