babu sikdar
১৯৭১ সালে আমি অনেকটাই ছোট, আমার তিন ভাই এক বোনের আদরের, ছোট সন্তানটি ছিলাম আমি আমার বয়স ছিল তখন প্রায়,৬ বছর হঠাৎ যুদ্ধ ঘোষণা হল রাজশাহী মহাকুমায় আমার জন্মস্থান। যুদ্ধ কি জিনিস তা বুঝে উঠতে পারিনি। হঠাৎ দেখছি আকাশে যুদ্ধবিমান গোলাবারুদ নিক্ষেপ করছে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন স্থানে। খোলা জিপ পাকিস্তানি বাহিনী গাড়ির বহর নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে এক প্রান্ত থেকে রাজশাহী শহরের দিকে, আমার বাবার কোলে আমি। আমার বাবা আমাদের বাড়ির প্রাচীরের উপর দিয়ে উঁচু হয়ে দেখছিল, গাড়িবহর গুলো কোন দিকে আসছে এই মুহূর্তে একটি বন্ধুকের গুলি আমার কানের পাশ দিয়ে, বাড়ির দেয়ালের গায়ে পড়ে। আমার বাবা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিল আমরা বাংলাদেশ থেকে রিফুজি হিসাবে ভারতে চলে যাব। সেদিন আর যাওয়া হল না হঠাত, আমার শরীরে জলবসন্ত উঠে গেল রাতের মধ্যে। আমি জলবসন্ত যন্ত্রণায় ছটফট করছি। পরের দিন সকালে আমার মা আমাকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেন গেটের ঢুকতেই, ইমার্জেন্সির সামনে আমি নিজ চোখে দেখি দুটি লাশ পড়ে আছে হয়তো বিশ ত্রিশ মিনিট আগে তাদেরকে গুলি করেছে। আমি চরম ভয় পায় সেই লাশ দুটি দেখার পরে আমার মা তাৎক্ষণিক সেই রিস্কা নিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে ফিরে আসি সেদিন রাতেই আমরা সপরিবারে চলে যাই ভারতের বহরমপুর। গুদুম পাড়া নামক একটি গ্রামে। সেখানে শরণার্থীদের জন্য ক্যাম্পিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং অনেক মোর্চা খোঁড়া হয়েছিল। সেই গ্রামের এক মুরুব্বী আমার মাকে দেখে ধর্ম মেয়ে ডাকে আমরা নানা হিসাবে তার বাড়িতে আশ্রয় নেই পায় ৯ মাস থাকি, আসলে তখন বাঙালি হিসেবে ভারতের মানুষের অনেক ভালোবাসা সহযোগিতা ছিল বিধায়, আমরা তাদের নিজ পরিবারের মতো দীর্ঘদিন থাকার সুযোগ পেয়েছিল। আমার বাবা আমার মাকে না বলে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং করতে চলে যান। ট্রেনিং শেষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আমরা বাবার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। যুদ্ধ শেষ হয়। দেশ স্বাধীন হয় তারপরও বাবা আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। আমার মা আমাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে ফিরে আসে। এসে দেখি নিজ বসতবাড়ির শূন্য অরণ্য শুধু বাড়িতে আছে বাড়িতে আর কিছুই নেই। স্বাধীনের একমাস পরে বাবা আমাদের খুঁজে ফিরে আসে বাড়িতে আমরা ফিরে পাই পুরো পরিবারকে একত্রে বসবাস করি। স্বাধীনের পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে অভাব থাকাটাই স্বাভাবিক অনেক অভাব, আমার মনে পড়ে আমি লাইনে দাড়িয়ে লঙ্গরখানার রুটি নিয়ে আসতাম। অসহায় গরিব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেছিল বিভিন্ন সংস্থা এবং মুক্তি যোদ্ধা মুজিব বাহিনী তাদেরকে বলা হয় তাদের সহায়তায় লঙ্গরখানা খাবার তৈরি হতো তিন বেলা। কিছুদিন পরে দুর্ভিক্ষ কমে আসে বিভিন্ন দেশের সাহায্য-সহযোগিতায় উন্নয়নে ধাবিত হয় বঙ্গবন্ধুর দেশ পরিচালনার প্রচেষ্টায়। আমার একটি স্মরণীয় ঘটনা। আমি, ১৯৭২ সালে ৯ ই মে রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন সফরে বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছিলাম আমার বাবার কাঁধে চড়ে। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার আদর্শিক প্রেম সৃষ্টি হয়। আমার বাবা ছিলেন একজন মুজিব প্রেমি আমার বাবার ধারাবাহিকতা ধরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার আদর্শ ও শ্রদ্ধা তৈরি হয় সেই থেকে আমি আজ অবধি বঙ্গবন্ধু প্রেমী মুজিব সৈনিক। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগ করেছি। কলেজ জীবনে ছাত্রলীগ করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতির সাথে যুক্ত কিছু চাওয়া কিছু পাওয়ার আশায় নয় শুধুই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অফুরন্ত ভালোলাগা ও ভালোবাসা। আমার জীবনের বাস্তব ইতিহাস গল্প রূপে তুলে ধরলাম লেখার মাঝে যদি ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাইকে জানাই আমার পক্ষ থেকে সংগ্রামী মুজিবীয় সালাম। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ উপলক্ষে সবার জন্য রইল শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।