Mst.Mahbuba Yasmin
৭ বছর পর ছেলে দেশে ফিরছে।তাই মায়ের নানান আয়োজন। ছোট বেলা খোকা যখন বিকেলে খেলতে যেতো মা অপেক্ষা করতো খোকার ঘরে ফিরে আসার।আজও তেমনিভাবে মা অপেক্ষা করছে খোকার।খোকা ছাড়া মায়ের কেও নেই এই পৃথিবীতে। খোকা বাড়ি এলো। মা খোকার সব পছন্দের খাবার রান্না করেছে।নিজ হাতে তুলে খাইয়ে দিলো খোকাকে।খোকা মা কে বলল এবার সে আর বিদেশে ফিরে যাবে না। মা এর সাথে সে দেশেই থাকবে।কিন্তু চারিদিকে করোনার প্রভাব।এর মধ্যে খোকা এসেছে বিদেশ থেকে কেও দেখা করতে এলো না।তবে পাশের বাড়ির নিতু এলো। খুব মিস্টি মেয়ে।খোকার মায়ের ও পছন্দ নিতুকে।নিতুও খোকা কে খুব পছন্দ করে।এদিকে কয়েকদিনের মধ্যে মায়ের শরীরটা খারাপ হতে থাকলো। খোকা মায়ের খেয়াল রাখতো।মাঝে মাঝে নিতুও আসতো।.নিতু লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার রান্না করে দিয়ে আসতো খোকার বাড়িতে।৩-৪ দিনের মধ্যে খোকা অসুস্থ হয়ে যায়। নিতু বুঝতে পারে কঠিন কিছু অপেক্ষা করছে।নিতু হাসপাতালে নিয়ে গেলো খোকা আর তার মা কে।দুজনেরই অক্সিজেন এর খুব দরকার।কিন্তু হাসপাতালে এতো ভিড় যে সেখানে কোনো খালি বেড নেই।বেড এর একটা রোগি মারা গেলে বেড ফাকা হয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস হাসপাতালে যারা আসে তারা নিজেরা বাচতে অন্যের মৃত্যু কামনা করে।তবে খোকা এই অসুস্থ অবস্থায় শুধু মা এর চিন্তা করছিল।সে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় কে অনেক অনুরোধ করে একটু অক্সিজেন এর জন্য। সন্ধ্যা নামছে,না চাইতেও এর মধ্যে নিতুর ফিরে যেতে হলো বাড়িতে। ।ভাগ্যক্রমে একটা বেড ফাকা হলো। ওয়ার্ডবয় এসে খোকা কে বললো। এদিকে খোকার অবস্থা ভালো না।তার শরীর আরও খারাপ হচ্ছে।সে নিশ্বাস নিতে পারছে না।তবে মা কে তো বাচাতে হবে।সে ওয়ার্ডবয় কে বললো তার মা কে সেই বেডে নিয়ে খুব জলদি অক্সিজেন এর ব্যবস্থা করতে। মা কে বেডে দিয়ে খোকা বারান্দায় অপেক্ষা করছিল।কিন্তু সে যে আর নিশ্বাস নিতে পারছেনা।সে হাসপাতালের বারান্দায় কাতরাচ্ছে একটু অক্সিজেন এর জন্য।মাঝরাতে সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে চলে গেলো এই পৃথিবী ছেড়ে। তার মা কে ছেড়ে,তার না পাওয়া ভালোবাসার মানুষ কে ছেড়ে। নিতু খবর পেল খোকার মৃত্যুর।কিন্তু সে আসতে পারলো না।কোন অধিকারে আসবে? কিসের অধিকারে?! কোন সম্পর্কের অধিকার দেখাবে?! সে কাদঁতে থাকলো দিন রাত।খোকা কে দাফন করলো সেচ্ছাসেবীর দলের ছেলেগুলো।মা যে শুধু খোকা কে খুজে।কেও খোকার মা কে বলেনি খোকা যে আর নেই।সবাই জানিয়েছে খোকা পাশের ওয়ার্ডে, তার চিকিৎসা হচ্ছে। কিছুদিন পর মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসে জানতে পারলো তার ছেলে আর নেই।মা এর চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে লাগলো।নিজের জীবনের বিনিময়ে খোকা তার মা কে বাচিঁয়ে গেছে।যেভাবে হাজারো খোকা নিজের জীবনের বিনিময়ে দিয়ে গেছে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ।দেশ টাও তো আমাদের মা। এই মা বাচানোর দায়িত্বটা নিয়েছিল তার সন্তান রা।এভাবেই আমরা পেয়েছি বিজয়।পেয়েছি আমাদের মাতৃভুমি।