স্বাধীনতার অজানা এক গল্প

Mahfuzur Rahman

মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছি লেন ১৯৭১ সালের ২৩শে এপ্রিল, ভোলা জেলায়। সেদিন পাকিস্তানি সেনারা আমাদের দাদা বাড়ি আক্রমণ করেছিলেন প্রায় ৪১ জন সেনাসদস্য। আমার বাবা, চাচা সহ গ্রামের প্রায় ১৮-১৯ জন কোন অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সেদিন পাকিস্তান সৈন্য রা আমাদের গ্রাম ঘেরাও করে, তার আগেই আমার বাবার নেতৃত্বে সবাই গিয়েছিল পটুয়াখালী ট্রেনিং নিতে। যখন শুনলো আমাদের গ্রামে মিলিটারি রা ঘেরাও করছে। সাথে সাথে তারাও রওনা দেয়। প্ল্যান করে কিভাবে তাদের অস্ত্র দিয়ে তাদেরকে মারা যায়। রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে ১৯ জন ৬ জনের দলে ভাগ হয়ে মিলিটারি চৌকির চারপাশ দিয়ে ঘিরে গোপনে এগোতে থাকে এবং একসাথে আক্রমণ করে মিলিটারি দের উপর।সবাই তখন ঘুমে ছিল, হঠাৎ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে কিন্তু ততক্ষণে তাদের সমস্ত অস্ত্র আমার বাবাসহ অন্যান্যদের দখলে চলে যায়। অস্ত্র হাতে নিয়েই গোলাগুলি আর তুমুল লড়াই হয় দুপক্ষের মধ্যে। দীর্ঘ ৬ ঘন্টার যুদ্ধে পাকিস্তানি মিলিটারি ২৬ জন মারা যায় বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অপরদিকে আমার বাবার সাথের ৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আমার বাবাও হাতে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তারপরও তিনি অসম সাহসীকতায় সেদিন আমাদের গ্রামের মানুষদের বাচিয়েছিলেন। আমার বাবা আজ নেই আমার পাশে কিন্তু তার লড়াইয়ের সাহস ভরা স্মৃতি গুলো আজও বেচে আছে হৃদয়ের অন্তস্থলে। তিনি একটা কথা সবসময়ই বলতেন "বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ তোদের জন্য দিয়ে গেলাম, কখনোই আদর্শ থেকে পিছপা হবি না।"