Raisa Mehzabeen
“জাগো নারী,জাগো বহ্নি শিখা” কবির এই আহ্বানে কেবল নারীকে জেগে উঠতে বলেননি, তিনি তাদের উজ্জ্বল জ্যোতি হতে বলেছেন। যে উজ্জ্বল জ্যোতি সবাইকে পথ দেখাবে। তেমনই এক উজ্জ্বল শিখার নাম রাইসা মেহজাবীন। রাইসা মেহজাবীন জন্মগ্রহণ করেন খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায়।শৈশবের কিছুকাল সেখানে কাটলেও পড়াশোনা এবং বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। শৈশবকাল থেকেই প্রকৃতির প্রতি এক অকৃত্রিম মায়া ছিলো তার,যে মায়া আজও বর্তমান। পড়াশোনার পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন সেই ক্লাস সিক্স এ থাকতে ২০১২ সাল থেকে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে স্কাউটিং এর মাধ্যমে একজন চেঞ্জ মেকার হয়ে ওঠার শুরু, এর পর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতেও কাজ করেন কিছুদিন। অপরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার মতো মহৎ গুণাবলি লক্ষ্য করা যেতো খুব ছোট্ট থেকেই। জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু অর্জনও আছে এই মানুষটির। ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড জেদি স্বভাবের মেয়েটি বর্তমানে পড়াশোনা করছেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব এপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স (ভূতপূর্ব কলেজ অব হোম ইকোনোমিক্স) এর খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে নতুন ভাবে শুরু হয় তার একজন চেঞ্জ মেকার হয়ে ওঠার গল্পের। কথায় আছে, অসির চেয়ে মসী বড়। তার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ রাইসা মেহজাবীন। ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আগস্ট মাসে তিনি একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে যুক্ত হোন “নিউট্রিশন বি” নামক পুষ্টিস্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সংস্থায়।খাদ্য,পুষ্টি এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক তথ্যের সন্নিবেশে লেখার মাধ্যমে শুরু হয় তার কন্টেন্ট রাইটার হয়ে ওঠার শুরু। লেখালেখির পাশাপাশি প্রোগ্রাম অর্গানাইজার এবং হোস্ট হিসেবে যথেষ্ট দক্ষতা তার। বিভিন্ন সচেতনতা বিষয়ক তথ্যছবি তৈরিতে’ও আছে বিশেষ জ্ঞান তার।কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজও করেছেন তিনি। চেঞ্জ মেকার হওয়ার তাগিদে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ইন্টারন্যাশনার ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার’এ তিনি যুক্ত হন একজন ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে। কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং শ্রদ্ধা দেখা যায় লক্ষণীয় ভাবে,বিভিন্ন লেখালেখির কাজও করতে থাকেন তিনি। সেই সময় তার জীবনে এক বিশেষ পরিচ্ছেদ আসে। আন্তর্জাতিক সংগঠন Youth Parlament - SDG-16 international event on Youth Leadership Against Confrontation with D-8 Youth Conference 2021 এ D-8 ভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। এই অর্জন তাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। তার অনুন্ধানী এবং তথ্যবহুল লেখনি গুলোর মধ্যে একটি লেখা প্রকাশ পায় আন্তর্জাতিক নিউজ মাধ্যম Blitz-এ,যা প্রচুর প্রশংসা অর্জন করে। লেখা-লেখির প্রতি তার নেশা বিপুল।তিনি যুক্ত হন “হেলথ এন্ড হাইজিন অলিম্পিয়াড” এ একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে। সে সময়ও তার কাজ ইন্টারন্যাশনার ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার (আইওয়াইসিএম) এ চলমান। কিছুদিন পর তিনি সেখানেও একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে যুক্ত হন।সম্প্রতি তিনি সেখানে ফরেস্ট্রি প্রজেক্ট লিডার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পরিবর্তন আনতে কলম’কে ব্যবহার করা যে কোন যুদ্ধের চেয়ে কম নয় যেটি করছেন রাইসা মেহজাবীন। তবে এই তার এই যুদ্ধ অসেচতনার বিরুদ্ধে, সচেতন ও সুস্থ পৃথিবীর জন্য। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তার লেখালেখি করার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে।“লেখালেখি নিয়ে আমার ইচ্ছে রয়েছে। পাশে দাড়ানোর এটিও একটি উপায়।সশরীরে সব স্থানে না পৌছাতে পারলেও আমার কথা হয়তো পৌছাতে পারবে আর সেটির স্থায়ীত্ব বেশী। আমার লেখা কোন তথ্যের মাধ্যমে যদি কেউ উপকৃত হয়,তবে তা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ এবং গর্বের” চেঞ্জ মেকার হিসেবে তার লক্ষ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি চাই প্রতিটি মানুষ ভালো থাকে আর তার জন্য আমার সাধ্যের মধ্যে যতটা করা সম্ভব আমি করবো।আমি চাই প্রত্যেকের মুখে হাসি ফোটাতে।আর সেই হাসির কারণগুলোর একটি যেন আমি হই” “জ্ঞান পারে সব অসেচতনতা সরিয়ে দিতে,আর সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে আমি চেষ্টা করছি সব সময় যেন তা সকলের কাছে পৌঁছোয় এবং তারা যেন তা বুঝতে পারে।সাম্প্রতিক সময়ে যে অসচেতনতা গুলো দেখা গিয়েছে তার মূল কারণ প্রকৃত জ্ঞানের অভাব”-তিনি উল্লেখ করেন। তাকে অনুরোধ করা হয় চেঞ্জ মেকার হতে আগ্রহীদের জন্য কিছু বলতে। তিনি বলেন, “দেশের উন্নতির জন্য অতীতকে ধরে রাখতে নেই। বর্তমানকে সুস্থ এবং ভবিষ্যৎ’কে সুন্দর করতে প্রত্যেককেই কাজ করতে হবে।আর সেই কাজটি একমাত্র তরুণ শক্তিই করতে পারে।আর তাই সকলকে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে” “আমি চাই বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্ব একদিন এগিয়ে যাবে।বিশ্বে দারিদ্রতা ও অসহায় নামে কোন শব্দ থাকবে না।সকলের পাশে সকলেই দাঁড়াবে।আর সেই দিন বাস্তবায়নে ভুমিকা রাখবে এখনকার সকল চেঞ্জ মেকার”- তিনি এই আশা ব্যক্ত করেন।