জেনারুল ইসলাম
আষাঢ়ের নিদানকাল ও এক ফিনিক্স পাখি - জেনারুল ইসলাম জিসান আজ এই শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুণ লেখক। গল্পে গল্পে জীবনের কথা বলা এই সফল গল্পকারের জীবনে পাড়ি দিতে হয়েছে উত্তপ্ত মমরুভূমি , তুষারের হিমালয় কিংবা উত্তাল সমুদ্র। এ যেন গল্পের ভেতর গল্প। জীবনের ভেতর জীবন,যেনো ফিনিক্স পাখি। বাড়ির দেউরীর সীমানাটা অতি সহজেই পাড় হয়ে সোজ অন্দরমহলে চলে এলো দুটো বিপদ। জৈষ্ঠ্যমাসের বোরো ফসল ঘরে তোলার কয়েকদিন পরের পরিস্থিতি। তখন ইদুরের ঘরেও মাচা ভর্তি ধান। বাবার চল্লিশার দিনে উঠোন ভর্তি পানি। সহজ করতে বলতে গেলে বাবা মৃত্যুর মাসখানেক পরেই বন্যায় ডুবে গেলো পুরো হাওরএলাকা। ঘরভর্তি পানি,মাচাভর্তি পানি গোয়ালের গরু - মাচার ধান সব ভাসে বন্যায় পানিতে। বাবার রেখে যাওয়া শেষধনটুকু সোনার ধান ভাসলো বন্যাজলে,পরের বছর আর কষ্ট করে ধান কাটতে হয়নি পাকা ধানই ডুবে যেয় অকাল বন্যা। জীবন যেখানে ভাসমান কচুরিপানা সুখ সেখানে নীড়হারা পাখি। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিটির অনুপস্থিতি কতোটা শুণ্যতার সৃষ্টি করে তা জিসান ছাড়া কেউ অনুধাবন করতে পারবে না। তাই তো দশ বছর বয়েসী জিসান পিতার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কোমল হাতে। যে হাতে শাপলা আর হিজলফুলে খেলা করার কথা সে হাতে তুলে নেয় লগি -বৈঠা,জাল। হাওরজলে মাছ ধরে সংসার চালায়।কাচের মতো স্বচ্ছজলে দেখে জীবনের ছবি,আঁকে স্বপ্ন।এ স্বপ্ন আকাশের সীমা ছাড়িয়ে। জেলেদের মাছের আড়তে সকাল বেলা পিঠা বিক্রি করে স্কুলের চালায়, কলেজে পড়ার টিউশনি করে পরিবার ও পড়াশোনা চালিয়ে যায়। স্বপ্নটা মচকে যায় বহুবার তবুও ভাঙ্গে নি। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমান জিসান।বুকে দেশ ও মায়ের সেবা করার ব্রত। স্বপ্ন লেখক হবার। কলমের কালিতে মানুষের সুখ,দুঃখ,বিরহ-ব্যাথার গান লিখবার বাসনা। শহরে এসে কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে ঘুরেন সম্পাদকের অফিসে অফিসে। একদিন বইমেলায় প্রকাশ হয় গল্পের বই। বেশ আলোড়ন,সাড়া জাগানিয়া। জীবন মানেই তো গল্প। এ গল্পও জীবনের গল্প। এ গল্প নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের গল্প। এ গল্প। যাপিত জীবনের গল্প। এ গল্পটা বেড়ে উঠা এক মানুষের গল্প। লেখক- জেনারুল ইসলাম পূর্বদরগা গেইট, আম্বরখানা,সিলেট।