নাহিদের জীবন সংগ্রামের গল্প...

MD RUBEL MIA

■শৈশব ও শিক্ষাজীবন: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ছবির মত সবুজ সুন্দর একটি গ্রামে শৈশব কাটালেও বাবার ভালোবাসার অভাব ছিলো নিত্য সঙ্গী। কারণ বাবার বিদেশে চাকুরী জন্য ভালোবাসা খুব কাছে থেকে পাওয়া হয়নি। আমি যদি শুরু থেকে বলি আমার জন্ম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াতে। আমার জন্মের ১ বছর পরে বাবা চাকুরী জন্য পরিবারে বাহিরে সেখান থেকে আমার প্রথম জীবন সংগ্রাম শুরু হয়।যৌথ পরিবারে থাকা অবস্থায়  আমাকে আর আম্মুকে ভালো চোখে দেখতে পারতো না।পরিবারে সাপোর্ট না পাওয়াতে আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। বলতে পারেন আম্মু একজন সংগ্রামী নারী সিদ্ধান্ত নিলেন আলাদা বাসায় থাকবেন কারণ একটাই ছিলো তার একমাত্র সন্তানকে সুশিক্ষায়  শিক্ষিত করবেন।বাসা ভাড়া আমার পড়াশুনার খরচ খুব কষ্ট করে যোগাড় করতেন। তখন বাবার চাকরীতে  যা আসতো তা খুব কম ছিলো। আমার মনে আছে আমার ১ টা স্কুল ড্রেস ছিলো বর্ষা কালে ভিজে আসলে রাতে শুকাতে দিতাম। সেটা আবার সকালে পরিধান করে যেতাম।কোনো কোনো দিন সকালে না খেয়ে যেতাম আবার স্কুলের টিফিনের সময় ১-২টা সিঙ্গারা খেয়ে থাকতাম। কিন্তু আমাদের পারিবারিক ভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো সেটার সুফল আমরা পাইনি।তখনই বুজতে পারছিলাম সংগ্রামে জীবনটায় বহুদূর হেটে সফলতা কাছে যেতে হবে।বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের একটা ভালো অবস্থান তৈরি করতে চেয়ে ছিলেন সেটায় আজ  বাবা সফল।সালটা ২০০৭ নভেম্বর মাসে শুরু হয় ইট পাথরের শহরের জীবন।২০১৭ সালে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে পড়াশুনা শেষ করে একটা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে   প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবনের শুরু সাথে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লিখিয়ে দুটা প্রতিষ্ঠান করেছি।মানুষ হিসেবে  স্বপ দেখতাম, স্বপ্নকে বাস্তবে পরিনত করতে চেষ্টা করতাম।  আজকের এ অবস্থানে নিয়ে আসার সূত্রপাত বা উৎসাহ ছিলেন আমার মা। চলুন আজ ঘুরে আসেন এই অসাধারন সফল মানুষটির সাফল্যের ও ব্যর্থতার পথের জানা অজানা কিছু কথা। ■ক্যারিয়ার:  শুরুটা হয়েছিল  চাকরি দিয়ে।পড়াশুনা শেষ করে  ইন্টারন্যাশনাল একটা কোম্পানিতে কাজ শুরু। তারপর ব্যবসা শুরু করি।  মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে  প্রায় একক প্রচেষ্টায় ই-গ্যালারি ,আমকো কে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতেছি – কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে  এক সময়ে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু  চেষ্টা থাকলে সুফল আসবেই। আমি ভুল করতে করতে অর্জন করেছিএবং শেষ পর্যন্ত এগুলো আমাকে সঠিক পথে আসতে সাহায্য করেছে। আমি কিছু  কার্যকর টেকনিক এর দেখা পেয়েছি যেগুলো আমাকে বাধা বিপত্তি পার হয়ে সত্যিকার কাজ করতে সাহায্য করেছে।নিজের বুদ্ধি আর ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এই সেলস টেকনিক গুলো অনুসরন করলে, নতুন উদ্যোক্তা  হিসেবে সাফল্যের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। ■জীবন: হতাশা, ও অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়ার গল্প: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর  সমস্যায় পড়তাম।   স্কুল কলেজে পড়াশুনা হয়েছিল বাংলা মিডিয়ামে।  কিন্তু  বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা সব লেকচারই দিতেন ইংরেজীতে – এবং  তাঁদের লেকচারের প্রায় কিছু কিছু বুঝতে কষ্ট হতো।  এমনকি যখন  শিক্ষকরা  ইংরেজীতে প্রশ্ন করতেন –  বোকার মত চুপ করে তাকিয়ে থাকতাম।একটা সময়ে  হতাশ হয়ে ক্লাসে যাওয়াই ছেড়ে দিতাম।ক্লাসে যাওয়ার বদলে  লাইব্রেরিতে বসে ইংরেজী বই পড়তাম এবং সেইসাথে সফল মানুষদের নিয়ে লেখা বই ও জীবনী পড়তাম। সফল মানুষ, বিশেষ করে সফল ব্যবসায়ীদের সাফল্যের কাহিনীগুলো পড়ে  একটি জিনিস বুঝেছিলেন যে, জীবনে যদি বড় হতে হয় – তবে অবশ্যই অন্যের অধীনে থাকা যাবে না।  অর্থা‌ৎ নিজেকে নিজের বস হতে হবে।  উদ্যোক্তা হতে হবে।উদ্যোক্তা হতে কিছু অর্থের প্রয়োজন ছিলো। তাই চাকরির জন্য চেষ্টায় বার বার ব্যর্থ হয়ে সফলতার পথে। ■অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে রুবেল মিয়া নাহিদের পথচলা:  ছোটবেলা থেকেই  মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি ।সমাজের অবহেলিত মানুষের মধ্যে যাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি ছিল তারা হলেন শিশু।  হাতেখড়ি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ।দক্ষিণ উপকূলের জেলেদের সন্তানদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন। নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশ ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করতে বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। দারিদ্র্য এ জনগোষ্ঠীর শিশুরা শিক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত যার ফলে সামাজিক ভাবে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সমাজের অন্যান্য দের সাথে বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০সালে জয় বাংলা ইয়ূথ অ্যাওয়ার্ড ২০২০ অর্জন । বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ সেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন এর মত বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে পাশে আছি।  সমাজ সেবকের এর পাশাপাশি একজন সফল তরুন  উদ্যোক্তা হয়ে চাকরি দেয়ার চেষ্টা করছি।  স্বপ্ন শুধু তরুণ নয় সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে সাথে নিয়ে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ দুর্দশা দুর করার পাশাপাশি একটি সুন্দর সমাজ তথাপি একটি সুন্দর দেশ গড়ার। আমি খুব সাধারণ জীবনযাপন করি।   সবচেয়ে বড় গুণটি হল,হার না মানা মনোভাব।  অপমানিত হয়ে ক্লাসে যাওয়া ছেড়ে দিলেও কিন্তু তিনি পড়া বন্ধ  করেনি।  ভাষার দুর্বলতা কাটাতে পড়েছি ইংরেজী, আর হতাশার মাঝে অনুপ্রেরণা খুঁজতে পড়েছি সফল মানুষদের গল্প।  না খেয়ে দিন কাটানোর পরও নিজের স্বপ্নকে ছেড়ে দেইনি।  এই শক্তিশালী মনোভাবই  শেষ পর্যন্ত সফল করতে সাহায্য করবে