হঠাৎ থমকে গেলাম!!!

আল মুমিন জাকির

এই কিছুদিন আগে শুষ্ক মনোরম পরিবেশে আমি আর সাদিক নিরবে বসে আছি।হঠাৎ তানজিল এসে আমাদের নীরবতা ভেঙে দিয়ে বলতে শুরু করলো, "এই তোমরা রেজাল্ট আনতে যাবে না?আমি বললাম তাইতো!১০টা বেজে গেছে, চল সাদিক যাওয়া যাক।সাদিক অনেকটা নীরব।বুঝতে পারলাম ওর পরীক্ষা তেমন ভালো হয় নি।ভালো হবেই বা কী করে?প্রশ্নপএের মান ছিল যথেষ্ট কঠিন।চির নিস্তব্ধ পাতালপুরীর মতো আমরা যেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলছি।স্কুলের গেইটে প্রবেশ করার পূর্বে সাদিকের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তে লাগল।আমি অনেকটা চিন্তিত।যদি পাশ না করি তবে বাবা ঘরে ডুকতে দিবে না।আস্তে আস্তে তানজিল, আমি(জাকির)এগিয়ে যাচ্ছি।সাদিক অনেকটা বিমর্ষ হয়ে আছে।আমি অনেকটা তাড়াহুড়ে করে D পাওয়ার লিস্টে নিজেকে খুঁজে চলছি।কিন্তু আমি নিজের নাম খুঁজে না পেয়ে হতাশ।হঠাৎ তানজিল আমাকে অনেক জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,জাকির তুই B এর লিস্টে আছিস আর আমি C লিস্টে।সাদিকের নাম খুঁজে পাচ্ছি না।হঠাৎ সাদিকের চোখ লাল হয়ে গেল।আর আশ্চর্য হয়ে দেখলাম ওর নাম F পাওয়া শিক্ষার্থীর লিস্টে।সঙ্গে সঙ্গে আমি আর তানজিল ওকে বোঝাতে লাগলাম,"তেমন কিছু হয় নি।সামান্য প্রি-টেষ্ট পরীক্ষা নিয়ে তুই এতো নার্ভাস?এই তো প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় তানজিল ফেল করলো,দেখলি না ও কেমন করে হাসছিল?"ও তাৎক্ষণিক সময়ে দৌঁড়ে নদীর পাড়ে চলে গেল।আমাদের সবার প্রিয় জায়গায় কুলাউড়ার আমানীপুর পার্কে।এই জায়গার পাশেই আমােদর স্কুল।ও চুপচাপ নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।বললাম চল বাড়িতে।ও আস্তে আস্তে বলল,বাবা আজ আমাকে প্রচুর মারবে।দেখ?টাকার অভাবে ভালো শিক্ষকের কাছে পড়তে পারি না।গরীব বলে কেউ আমাদদের ভালো চোখে দেখে না।আর শিক্ষকরা.......বলে শেষ না করে চলে গেল।দুইদিন ধরে বাবার বকা খেয়ে চলছি। বাবাকে বললাম,আমি তো আমার বন্ধুদের চাইতো ভালো রেজাল্ট করেছি।বাবা লাঠি নিয়ে আসছিল,আমি তাড়াতাড়ি করে সাদিকের বাড়ির দিকে চলছিলাম।দেখি ওর বাড়িতে যথেষ্ট ভীড় ও কান্নার শব্দ।আমি থমকে গেলাম! দৌড়ে সাদিকের ঘরে প্রবেশ করি।আর যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।দেখলাম সাদিক ফ্যানের সাথে ঝুলছে।ওর মৃতদেহ দেখে আমি নিস্তব্ধ, নিঃসাড়। ওর মামা বললেন,সাদিক তোমার জন্য চিঠি রেখে গেছে।ধীরে ধীরে চিঠি পড়তে লাগলাম।যতই পড়ছি ততই রাগ বেড়ে চলছে এই শিক্ষিত সমাজের প্রতি।তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত নয় বরং কুশিক্ষায় শিক্ষিত।ওর চিঠির খন্ডাংশ তুলে ধরছি,"আমি গরীব।আজ কত মানুষ আছে যারা দূর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে, আর আজ আমার গরীবরা যথাযোগ্য সম্মানও পাই না।চেয়েছিলাম বিজ্ঞানী হতে।কিন্তু এই সমাজ আমাকে তা হতে দিলো না।সব জায়গায় দূর্নীতি ও আর মানুষের স্বার্থপরতা।শিক্ষিত মানুষের কথার ভীড়ে আমি মূমুর্ষ।চলে গেলাম,ভালো থাকিস।এই চিঠির অভিজ্ঞতা আমার নিজের জীবনের সাথে অনেকটা সামন্জস্যপূর্ণ।তবে আমি অনেকটা শক্ত।তাই দুর্বল হই নি নামমাএ সামাজিক মানুষের নিকট।টাকার অভাবে আর মানুষের হীন মনোভাবে আমি কোনঠাসা হই নি।তাইতো এখনো বেঁচে আছি।রেজাল্টের পর প্রতিবেশীর অহেতুক কথা আমাদের সমাজের চিরচারিত স্বভাব।এই নামমাএ শিক্ষিত মানুষগুলো নির্মম হয়।তার জ্বলন্ত উদাহরন সাদিক।সাদিকের ফেল করার রেজাল্ট জানার পর প্রতিবেশীরা তার বাবাকে নানাভাবে কথা শুনাতো।একদিন তো ওর বাবা ওকে যথেষ্ট মেরেছে।ঘরের বেলকুনিতে দাড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে ওর মায়ের প্রতি বাবার অত্যাচার দেখছিলো।ওর কিছুই করার ছিল না।তাই সে চলে গেল।আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মানুষের মধ্যে থাকা উচিত ছিলো পরস্পর সহযোগীতার মনোভাব।কিন্তু তার বিপরীতে হীন চিন্তা আমাদের সমাজে আজ পরিলক্ষিত।সেদিন কায়সারের বাবা তাকে A পাওয়ার কারণে মারছিলো।দেখে আঙ্কেলকে বললাম, ছেলে বড় না, রেজাল্ট বড়?উনি বড় বড় চোখে আমার দিকে থাকিয়ে আছেন।তখন কামাল চাচা কায়সারের বাবাকে বললেন,আজ যদি তোমার ছেলে ওর বন্ধু সাদিকের মতো কাজ করে তে কী হবে?পাবে ছেলেকে ফিরে?উনি কান্না করতে করতে বলতে লাগলেন,প্রতিবেশীর জ্বালায় পারি নি।সারাক্ষণ ছেলের রেজাল্ট কী হয়েছে,কেন হয়েছে তা জিজ্ঞেস করে।তারপর ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলেন,আমার ছেলে আমার জীবন।তখন আমি বুঝতে পারলাম এই সমাজ কতটা নির্মম,মানুষগুলো কতটা নিষ্ঠুর।তবে কিছু কিছু আলোকিত মানুষের কারণে বেঁচে যায় কায়সারের মতো নিষ্পাপ জীবন।আজ সমস্ত রাগ সমাজের শিক্ষিত মানুষের প্রতি,যারা হীন চিন্তা নিয়ে বসে থাকে।তাই একজন আলোকিত মানুষ হয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে মানুষের নিষ্ঠুর চিন্তাধারাকে ভেঙে দিয়ে আমরা সুন্দর সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তুলবো।এটা হোক আমাদের আশা,আকাঙ্খা। ~~~~~সমাপ্ত~~~~~ লেখক:::আল -মুমিন জাকির