রুদমিলা আযীম
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট বিশ্বাস হৃদয়ে, হবে হবেই দেখা দেখা হবে বিজয়ে। জীবনে লক্ষ্য থাকতে হবে , আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য জীবন যুদ্ধের সকল বাঁধা অতিক্রম করতে হবে। ঠিক ছয় বছর আগে এমন লক্ষ্য এবং নিজের উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে ছিলাম। বাবা এ পৃথিবীতে নেই নিজেদের স্থায়ী কোনো সম্পদ নেই। যৌতুকের কাছে হার মেনে ভেঙ্গে যায় সংসার। ছোট কোলের বাচ্চা নিয়ে জীবন যুদ্ধের সূচনা। অনেকেই ভেবেছিলো আমি মনে হয় পড়াশোনা কমপ্লিট করতে পারবো না , আমার ভবিষ্যত অন্ধকার । ছোট কোলের বাচ্চা , কীভাবে উঠে দাঁড়াবে। আমি এক পা আগাতে চাইতাম আর দশ পা পিছনে যেতাম মানুষের কথায়। পুরো এক বছর ঘরে থাকতে থাকতে বাহিরের আলো দেখতে কেমন ভুলেই গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় বর্ষে একটি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলাম বলে একটি বছর আরো পিছিয়ে গেলাম। তখন খুব কাছের মানুষ ও বললো আর পড়াশোনা করতে হবে না বাদ দেও। কিন্তু আমি এত সহজে আমার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দিবো না , তাই আমি এটাই মেনে নিলাম আমি এখান থেকেই শুরু করবো। আম্মু আমাকে সাপোর্ট করলো আমি ও মনে জোর পেলাম। এগিয়ে চললাম স্বপ্ন পূরণের পথে আমার বাচ্চাটার সব দায়িত্ব আমার মা নিলো তাই আমার পথে যতই বাঁধা ছিল সব আমি অতিক্রম করে এগিয়ে চললাম। পড়াশোনার পাশাপাশি কোচিং সেন্টারে , টিউশনি পড়াতাম, কিন্ডারগার্ডেন স্কুল চাকরি নিলাম। সারাদিন পরিশ্রম করে মাসে বেতন পেতাম ৪০০০ টাকা । ছয়মাস পর ৬০০০/টাকা বেতনে প্রায় দুই বছর গেলো আমার এখনো মনে আছে তখন আমি ফাইনাল ইয়ারে ছিলাম একটি কোচিং সেন্টারে আমাকে ৪৫ মিনিটের একটি ক্লাসে জন্য ৩০ টাকা দিয়ে ছিলো এক মাস পরে আমাকে ১২০০ টাকা দিয়ে ছিলো টাকাটা হাতে নিয়ে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে লাগলো । তারপরও হাল ছাড়িনি আমাকে এগিয়ে যেতেই হবে। সব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে এগিয়ে চললাম।কত কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছি তা কেবল আমিই জানি। কত জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়ে ব্যর্থ হয়েছি কারন আমার কোনো রেফারেন্স ছিল না একটু কষ্ট তো করতেই হবে তা আমি জানতাম। এরপর সেই কাঙ্খিত সময় , আমার মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে গ্রাড্যুয়েটস গাউনে দেখবে। সেই দিনটি ছিল আমার স্বপ্ন পূরণের দিন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি ছয় মাস পর খুব ভালো একটি গ্রুপ অব কোম্পানিতে চাকরি হলো এবং বেতন হলো কষ্টের একমাসের বেতনের তিনগুন। মা আর ছেলের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আর আমাকে কেউ করুনা করে উপদেশ দিতে আসে না , কারন আমি করুণার পাত্র নই ।