আহমদ মিয়া
কলেজ সবাই আসছে।কিন্তুু কোথায় খোঁজতে লাগলাম।কলেজর স্মৃতিসৌধের কাছে খুলা জায়গায় বসে সবাই সময় কাটাতাম। হয়তো এখানে সবাই। এ দিকে আসতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। একটুখানি এগিয়ে গেলাম। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম।এখানে হচ্ছে কী? কেউ কাঁদে আবার কেউ হাসে। ইচ্ছে হলো দমক দিয়ে জিজ্ঞেস করি সে কাঁদে আর তোমরা হাসছো কেন? তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধু বান্ধবী কেউ নেই, এরা সবাই স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষের। তাই ক্লাসের দিকে চলে যাচ্ছি। কান্নার আওয়াজ টা বেড়েই চলছে। তবুও চলে যাচ্ছি তবে মন, কিছুতেই বসছে না।ভাবতেছি ছোট ভাই বোনদের বিষয়ে জড়ানো কি উচিৎ হবে।এই ভেবে হাঁটতেছি।হঠাৎ হাবিবউল্লাহ পাঠাগারের দিকে যেতে বললো।তর একটা উপন্যাস দেতো পড়ি।তার হাতে উপন্যাস দিয়ে চলে আসছি। কিরে বস এখানে, না তুই পড় আমার একটা কাজ আছে। অহ! কবিদের কত কাজ, আচ্ছা যা সময়মতো চলে আসিস।বারবার মেয়ে টার কান্নার আওয়াজ কানে ভাসছে আর মনে প্রশ্ন জাগছে মেয়েটি কাঁদে আর তার বন্ধু বান্ধবীরা হাসে কেন? অহ! তাতে আমার কী? যায় আসে আমি কেন? এত ভাবছি।মেয়েটিকে প্রশ্ন করলে যদি রেগে যায়, না,না যাবো না, আর এদিকে। এই ভাবতে ভাবতে মেয়েটার কাছেই চলে এলাম। নিজেকে সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম কেন? কাঁদো কী? হলো। উত্তর নেই। আবার জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছো কেন? কান্না বেড়ে গেলো। মহা মুশকিল বলো আমায় কাঁদো কেন? আবারও উত্তর দেয় নি। আরে কাঁদো কেন? বলো। কী? সমস্যা বলো যেভাবেই হোক সমস্যা সমাধান করবো।তবুও কিছু বলে না শুধু কাঁদে। বিরক্ত হয়ে মনে কষ্ট নিয়ে চলে যেতে লাগলাম। এত আগ্রহ নিয়ে আসলাম আর কি হলো জানতে পারলাম না। ঐ পাশের ছেলে মেয়ে গুলির হাসি আরও বেড়ে গেলো।তারা বলতে লাগলো দেখ দেখ ভাইয়ার কত মায়া তার জন্য কিন্তুু সেতো ভাইয়াকে পাত্তাই দিলো না। রাগ এলো বটে তবুও নিজেকে সামাল দিলাম। আগ্রহটা মন থেকে সরছে না কী? হলো কেন? কাঁদে আমার জানতেই হবে।আবার মনে মনে এটাও ভাবি মেয়েটাকে তো আমি কোনো দিন দেখিওনি তাহলে তার কান্নাতে আমার কী? আমার কেন? কষ্ট হচ্ছে। কেন? তার জন্য এত মায়া আমার। ভাবতে ভাবতে আবার গেলাম। এই শেষ বার জিজ্ঞেস করছি কী হলো বলো কেন? কাঁদো। কাঁদো কাঁদো কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো কেন? আপনারও আমায় নিয়ে হাসার ইচ্ছে হলো।সবাই তো অন্যের সমস্যায় আনন্দ পায়। আচ্ছা হাসেন,এত জনের হাসি সহ্য করতে পারছি আর আপনার হাসি কেন সহ্যতে পারবো না। সামান্য বিষয় হতে পারে কিন্তুু আমার জন্য সেটা অনেক লজ্জার।সবার উচিৎ ছিলো আমার পাশে দাড়ানো কিন্তু তারা উল্টোটা করলো যদিও খুব ভালো বন্ধু বান্ধবী ওরা।আর আপনি ত অপরিচিত। হাসার জন্যই ত বারবার আসছেন হাসেন যত ইচ্ছে আমায় নিয়ে মজা করেন। একদম না! আমি তোমার কান্না সহ্য করতে না পারায় বারবার আসছি। আগে বলবা তো কেন? কাঁদো। ভাইয়া আমার! বলতেই হঠাৎ বৃষ্টি নেমে আসলো সবাই ছুটা ছুটি করে হলে চলে গেলো। চলো আমরাও কোনো রুমে যায় না হয় বৃষ্টিতে ভিজে যাবো।এক পাও সরছে না। আরে কী? হলো। ভাইয়া আপনি যান আমি যাবো না। কিন্তুু কেন?এখনি মনে হচ্ছে মুশলধারে বৃষ্টি নেমে আসবে চলো। আমি সবার সামনে এভাবে হাটতে পারবো না। সাথে সাথেই ভাড়ি বৃষ্টি,তাকে রেখে যেতে পারলাম না। দুজনেই বৃষ্টি ভেজা। আপনি আমার জন্য বৃষ্টিতে ভিজবেন কেন? জানি না তোমায় ছেড়ে যেতে মন চাই না। মেয়েটির ব্যাগে ছাতা ছিলো। আমায় বলে নেন আপনি ছাতার নিছে দাঁড়ান। না তুমি দাঁড়াও আমার লাগবে না। তাহলে আমার জন্য ভিজতেছেন কেন?আচ্ছা আসেন দুজনেই দাঁড়ায়, একটু সংকুচ হলো তবুও দাঁড়ালাম। কারো কোনো কথা নেই। বৃষ্টি থেমে গেলো। আবার প্রশ্ন আচ্ছা তুমি কাঁদছিলে কেন।কান্না শুরু কাদো কেন? বলবাতো।আমি কীভাবে বাড়ি যাবো। অসহ্য! হলো কী? বলো আমি বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্তা করবো। আমা জুতো ছিঁড়ে গেছে!!! অহ! নো! এ সামান্য বিষয়ে এত কিছু, কেমন মেয়ে তুমি। মোটেও সামান্য না।ছেলেদের জন্য সামান্য মেয়েদের জন্য না। ওরা অধিক লজ্জাশীলা হয়, খালি পায়ে বা ছেঁড়া জুতো পায়ে দিয়ে হাটতে পারে না।আমি একটু বেশি লজ্জা পায়। আচ্ছা ঠিক আছে আমার জুতো পায়ে দাও ২০০ টাকা নাও বাজারে যেতে দু মিনিট সময় লাগবে। জুতো কিনে তারপর আমায় এখান থেকে নিয়ে যেও।অপেক্ষায় রইলাম। ভাইয়া! মানে।কোনো মানে চলবে না যাওতো। মেয়েটি চলে গেলো অপেক্ষায় রইলাম, হঠাৎ কল আসলো লজিং হতে, মেয়েটি কে? নাম কী? বাড়ি কোথায় কিছুই জানা হলো না চলে আসতে হলো।বাসায় আসার পর শুরু হলো অস্থিরতা, বারবার মেয়েটির কথা মনে পড়তে লাগলো।রাত ২.৫০ একটুও ঘুম আসেনি চোখে। এপাশ ওপাশ করতেলাগলাম।মুবাইল সাইলেন্ট আলো ভাসছে ভাবলাম এ্যার্লাম।কএকবার আলো ভাসার পর মুবাইল হাতে নিয়ে দেখি কল।৪৫ টা কল,অবাক কান্ড কে সে এত রাতে এতগুলো কল দিলো। ব্যাক করলাম বন্ধ। ফেইসবুক এ ডুকে দেখি ইনবক্সে নক করা, ভাইয়া আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন। সন্ধ্যা নেমে আসলো আঁধারে চার দিক ডেকে যাচ্ছে তাই আর অপেক্ষা করতে না পেরে চলে আসলাম। খুব সকাল সকাল কলেজে চলে আসবো।আপনি না আসা পর্যন্ত এক পাও নরবো না। কখন সকাল হবে মেয়েটির সাথে দেখা হবে। আনন্দের বন্যা বয়ে চলছে মনে।সকাল হতেই কলেজে চলে গেলাম।ঠিক আগের জায়গায় মেয়েটি বসা,কাছে যেতেই রেগেমেগে বললো আপনি এত পাষাণ কেন? ভোর হতেই চলে আসছি আর আপনি এখন আসলেন। আচ্ছা কে তুমি, তোমার নাম কী? আর আমার জন্যই বা এত সকাল কেন? আসছো। অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো, তারপর জানি না বলে দৌড়ে চলে গেলো চেতে চেতে বললো আপনার জুতোটা আর দিবো না। নিজেকে কত বোকা মনে হচ্ছে কেন? এ প্রশ্ন করলাম সারারাত ত আমারও ঘুম হয়নি।মেয়েটা হয়তো কিছু বলতো।আবার আসলো একটা ফুল হাতে দিয়ে চলে গেলো।আরে নামটা ত বলে যাও।শুনলই না লাফাতে লাফাতে যেন আনন্দের সাগরে ভাসছে। বিকালে আমার হাত ধরে হাঁটবে, কলেজর পিছনের পুকুরে শাপলা তুলবে, জোনাকি পোকার আলোয় আলোকিত হতে নিশীথে ঝোপের আড়ালে যাবে। আমরা যখন গল্প করতে বসবো কলেজের সব গাছের কঁচি পাতা আমাদের জন্য নব সাজে সজ্জিত হবে। পাখিরা উরে এসে আমাদের পাশে বসবে।নদীর পানিতে আনন্দের ডেউ আসবে। বাগানে নতুন পাপড়ি ধরবে।চার দিক যেন উল্লাসে ভেসে উঠবে।এই বলে চলে গেলো। দেখা হবে আগামীকাল। পরের দিনদেখা হবে আগামীকাল। পরের দিন সকাল সকাল চলে আসলাম এসে দেখি যেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলো সেখানে একটা চিরকুট, '' ভাইয়া আপনাকে যানি না কেন এত ভালো লাগে। এটা ভালো লাগা নাকি ভালবাসা বলে,জানি না। যত সময় যাচ্ছে ততই আপনাকে কাছে পেতে মন চাচ্ছে, সারাক্ষণ আপনার ছবি আমার দু চোখে ভেসে উঠে। আমি জানি আপনারও আমার মতো মনে হচ্ছে যেন দু জন সারাক্ষণ এক সাথে থাকি,দূরে যেতে মন মানে না। কিন্তুু আমি আমার অবহেলিত জীবনে আপনাকে জড়াবো তা মানতে পারি না।আমি প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। আমার জীবনে আছে শুধু হতাশা, ব্যর্থতা,লাঞ্জনা,যাতনা খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে আমি। আমার এ ব্যর্থ জীবনের সাথে জড়িয়ে আপনার জীবনে হতাশা,ব্যর্থতা নেমে আসুক তা আমি চাইনা, তাই কিছু না বলে কলেজ হতে বিদায় নিলাম।হয়তো আর কোনো দিন দেখা হবে না। ভাইয়া পারলে আমায় মাফ করে দিয়েন""। ইতিঃ কলেজের নাম না জানা মেয়েটি। এর পর থেকে আমার মনে নেমে এলো হতাশা, শান্তি নামক জিনিসটা জীবন থেকে হারিয়ে গেলো। সারাক্ষণ পাগলপারা হয়ে ঘুরে ফিরি। খোজতে থাকি কোথাও যেনো তার দেখা পাই। একদিন কলজের ফরম পূরণ করতে আসছি হঠাৎ পিছনে ভাই বলে ডাকলো। থাকাতেই দেখি মেয়েটি আরে তুমি। হুম। বহু খোজেছি আপনাকে পাইনি। আর দূৃরি না করে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব ও রাজি।পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে তাকে কাছে পেয়েছি সারাজীবনের জন্য। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিজয়।