আলোর দেখা মিলেছিল একদিন।

laboni Akter

২০২০ এর মে মাস, কি একটা করুণ সময় পার করে এসেছিলাম তখন। ইদের ঠিক দু দিন আগে মাস্ক, ppi কিনে আনলাম। মা কেঁদে কেঁদে বলছিল- মা এবার তো ইদে তোর জন্য কিছু কেনা হল না? তুই কি পরবি ইদে? আমি বললাম - দেখ, এই যে মাস্ক পরেছি, ppi পরেছি এটাই আমার ইদের জামা। বাবাকে করোনা টেস্ট করিয়ে নিয়ে আসি, বাবা সুস্থ হোক ওটাই আমার ইদের আনন্দ হবে। রোজার ইদের ঠিক কিছুদিন আগেই বাবা অসুস্থ হয়ে পরেছিল। ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট মোট কথা করোনার লক্ষণ। তখন এমন একটা সময় ছিল যে ভয়ে কেউ কারো বাসায় যেত না, কাউকে ডাকলে পাওয়া যাবে কি? কোনো ডাক্তারই কোভিড রিপোর্ট ছাড়া রোগীকে দেখার জন্য বসত না। একদিকে আমার বাড়িতে আমি, মা আর বাবা ছাড়া বাড়িতে কেউ ছিল না মানে সেই কঠিন সময়ে বাবার পাশে আমি আর মা ছিলাম। কিন্তু মা তেমন কিছু না বুঝায় সব আমাকেই সামলাতে হচ্ছিল অন্যদিকে কোনো ডাক্তার না পাওয়ায় বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। কি করব কিছু বুঝতে পারছিলাম না। ফোনে ফোনে কয়েকজন মানুষের সাহায্য নেয়ার চেষ্টা করলাম। কলেজের এক ভাই সাংবাদিক আরেকজন ফার্মেসির সম্পর্কে জ্ঞান থাকায় ওদের সাথে যোগাযোগ করে ঔষধের সাজেশন নিয়েছি তারপরও বাবার কোনো উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে গেলাম করোনা টেস্ট করাতে। হাসপিটালেও ভর্তি নেয়নি। তখন করোনা টেস্টও এত সহজলভ্য ছিল না। প্রথম দিন ফিরে আসলাম টেস্ট না করিয়ে। দ্বিতীয় দিন বহু কষ্টে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে ৩০ জনের মধ্যে টেস্ট করাতে সফল হয়েছিলাম। তবে রিপোর্ট আসতে বহু সময় লেগে যাচ্ছিল। আসল ইদের দিন সেদিন ভেবেছিলাম বাবা বোধ হয় আর বাঁচবে না। সে কি কান্নাকাটি, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বাবার। সেদিন পাগলের মত এদিক সেদিক কল করেছি, তারপর অনেক কষ্টে এক আঙ্কেলের দোকান থেকে নেবুলাইজার জোগাড় করে নিয়ম করে বাবাকে নেবুলাইজার দেয়ার চেষ্টা করলাম।৷ ঘরে বাবাকে পরিচর্যা করা শুরু করলাম গরম পানি, রঙ চা খাওয়ানো এমন কিছু বাদ রাখিনি বাবাকে সুস্থ করার জন্য। কয়েকদিন পর রিপোর্ট আসল বাবার করোনা নেগেটিভ ধরা দিল। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। মা শুধু ভয় পেয়েছিল করোনা হয়েগেলে সবাই এক ঘরে করে দিবে, করোনা হওয়া যেনো পাপ। মনে হচ্ছিল এ পাপ থেকে রেহাই পেলাম আমরা। তারপরও বাবা অসুস্থ ছিল অনেক সেবা করে বাবাকে সে সময় সাক্ষাৎ যমদূতের হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি এবং আমরা জয়ী হয়েছিলাম। করোনা হয়ত এ দেশ, এ পৃথিবী থেকে একদিন চলে যাবে কিন্তু যে মানুষগুলো করোনার সাথে যুদ্ধ করেছে ঠিক তারাই জানবে এ যুদ্ধে জয় পরাজয় কেমন। কি সব কঠিন সময় ছিল তখন। এ অভিজ্ঞতা আজীবন আমি বয়ে বেড়াব। গল্প সারাজীবন শেয়ার করলেও হয়ত এর আবেগ, অনুভূতি আর এর থেকে লড়ে যাওয়ার শিক্ষা কম হবে না। এ আমার জীবনে হার না মানার এক গল্প।