hasan Kajol
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর " ইকবাল হাসান কাজল--- শহিদ মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে সুমনা।বাবাকে দেখেনি সে।সুমনা পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার আগেই তার বাবা একটি মুক্ত স্বাধীন ভূখন্ডের জন্য জীবন দিয়ে পেছেন।বড় হয়ে বাবার অনেক গল্পই শুনেছে সুমনা।আজ বাবার অস্তিত্ব বাস্তবে টের পায় সে।শিহরণে সে এক দেশপ্রেমিকের স্পন্দন অনুভব করে। মুক্ত স্বাধীন বাংলার বাতায়নে উঁকি দিয়ে যায় এক বীর মুক্তিসেনার আলোকিত মুখ।হৃদয়ের আয়নায় ভেসে উঠে লড়াই দুর্নিবার একটি চিত্র।পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে একদিন মুক্ত স্বাধীন আবাসভূমির জন্য নিঃসংকোচে যারা জীবন বিলিয়ে দিয়ে গেছেন,তাদের জন্য গর্বে ভরে উঠে বুক।পাশাপাশি দেশ আর দেশের মানুষকে খুব আপন মনে হয়।নতুন উপলব্দিতে দেশাত্ববোধের অহমিকায় ভাললাগায়, আর ভালবাসার সত্বার সবটুকু উজাড় করে দিতে মন চায় মাতৃভূমির জন্য। আজ শ্রাবনের পড়ন্ত বিকেল।রোদ আর মেঘের লুকোচুরি। সুমনাকে নিয়ে যাই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর দেখাতে। দু’জন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দুটো টিকিট কিনে ঢুকে পড়ি।নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশা আমাদের চোখেমুখে।চেতনা নিরবধির বহ্নিশিখা আমাদের প্রাণে নতুন আবেশ জাগায়।মনে হয়,কে যেন জ্বালিয়ে রেখেছে আগুনের পরশমনি,যার ছোঁয়ায় ধন্য হয় জীবন ; শুদ্ধ হয় মন।মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর দেখার পর নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে সুমনা।বাবার জন্য অহংকার হয় গর্ববোধ করে সে।তার কাছে মনে হয় জাতি হিসেবে বাঙ্গালির যা কিছু অর্জন, যতটুকু অহকার তার অনেকটাই ধারণ করে আছে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর।সেগুনবাগিচা থেকে প্রেসক্লাবের দিকে যেতে, শিল্পকলা একাডেমির খানিক সামনে এসে হাতের বা পাশ দিয়ে রিপোটার্স ইউনিটির দিকে যাবার পথে, বামদিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর।টিকিট কাউন্টার ও গেটের পাশাপাশি অবস্থান। গেট আর সামনের খোলা জায়গার পুরোটা দখল করে রেখেছে একটি বিশাল আম গাছের ছায়া।ভিতরে ঢুকেই সুমনা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় গাছের ছায়ায়।তারপর চোখ বড় বড় করে সামনের বাড়িটার দিকে তাকায়।বিস্ময়ে অবাক করা প্রশ্নবোধক চোখে তাকায় আমার দিকে।অজানাকে ধারণ করার নেশায় ওর সারা মুখে তখন আলো ছায়ার লোকুচুরি।এবার সুমনার প্রশ্ন কোনদিক থেকে শুরু করবো।প্রশ্নের উত্তর দেয় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টিকিট চেকার ছেলেটি।হাত বাড়িয়ে সে দেখায় ভবন লাগোয়া পশ্চিম পাশের দক্ষিনের রুমটি।মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের এটিই প্রথম রুম।বাঙ্গালি জাতির গৌরবগাঁথা,ইতিহাসের সব ঐতিহ্য ধারণ করে আছে নিদর্শনগুলি।স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাই আমরা দু’জন।বাঙ্গালির মুক্তির সংগ্রাম ,সোনালী অতীত,ভাষা আন্দোলন,ইংরেজ বেনিয়া আর পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠরি নির্মম শাসন শোষণের অধ্যায়।প্রতিবাদ সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস।স্মৃতির অতীতে ডুবে যেতে যেতে খুঁজে পাই ইতিহাস,ঐতিহ্য,আবহমান বাংলার প্রাচীন জনপদ,সভ্যতার পথপরিক্রমা,জাতিসত্বার বিকাশ,মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের মূল উপাত্ত যদিও স্বাধনিতা যুদ্ধকেন্দ্রিক তবু তার পূর্বাপর অনুভূতি,পরিবেশ সবই তুলে আনা হয়েছে সংক্ষিপ্তাকারে।এসব গভীর মনোযোগে দেখতে দেখতেই আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ায় সুমনা।তার নিজের উপলব্দি থেকেই মন্তব্য করে ,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং আদর্শিক ভিত্তিসমুহ অর্জনে এই জনপদের মানুষ যে ত্যাগ বীরত্বগাথা সৃষ্টি করে গেছে, তা এখানে না এলে কোনভাবেই বুঝতে পারতাম না।মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর জাতীর গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সেতুবন্ধনে মূল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে এসে জানা যায় ,বর্তমান যাদুঘরের সীমিত পরিসরের জন্য সংগৃহিত সকল স্মারক প্রদর্শন করা যাচ্ছে না।যাদুঘরের সংগ্রহ ভান্ডারে পনের হাজারের বেশি স্মারক জমা আছে। বর্তমান ভাড়া করা পুরাতন জীর্ণশীর্ণ এই বাড়িটি সংস্কার করে চৌদ্দশ স্মারক প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।এসব নিয়ে কথা বলার ফাঁকে সুমনা ডেকে নিয়ে যায় ১৭৮৫ সনে ঢাকার কাছে শান্তিপুর গ্রামের একটি দুশ্য দেখাতে।এদেশের নারীরা সে সময় তাঁতের মাধ্যমে বিশ্বসেরা মসলিন বুনন করে চলছে।যে মসলিন তৎকালিন বিশ্বে সমদৃত ছিল।মসলিনের কারিগরি মান আজো সবার কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার।,----ছবি দেখতে দেখতে সুমনা বলে,সেই ১৯৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্তমিত হয়।লর্ড ক্লাইভের ষড়যন্ত্রে মীর জাফরের বেঈমানির ইতিহাস, আমাদের জাতি সত্বাকে যেভাবে কলংকিত করেছে, ঠিক তার উল্টো পিঠে দেশপ্রেমের পরাকাষ্টায় আমাদের গৌরবোজ্জল ইতিহাসকে ধারণ করে আছে-প্রফুল্ল চাকী,ক্ষুদিরাম বসু,তিতুমীর,মাস্টার দা সূর্যসেন,প্রীতিলগা,তাদের মহান আত্মত্যাগ আমাদের জন্য স্বর্ণোজ্জল ইতিহাস রেখে গেছেন।কিশোর ক্ষুদিরামের ফাঁসির স্মারক দেখতে গিয়ে কেঁদে ফেলে সুমনা।নির্ভিক বালকের অকৃত্রিম দেশপ্রেম। মা আর মাতৃভূমিকে ভালবেসে হাসতে হাসতে চলে যায় ফাঁসির মঞ্চে। মুখে তার জগৎবিখ্যাত সেই গান।একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি'।যুগে যুগে ক্ষুদিরামরা বাংলায় ফিরে এসেছে মাবুষকে জাগিয়ে দিতে।তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার করেছে, রাজপথের মিছিলে।আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে,বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠে,বিদ্রোহ- বিপ্লবে,হাজার বছর ধরে ক্ষুদিরাম বাঙ্গালির চেতনায় অগ্নিমশাল হয়ে জ্বলবে।বাংলার বয়ে যাওয়া ইতিহাসের শ্রোতধারায় যুক্ত হবে অর্জনের অহংকার।--১৬৪৮ সালে ইংরেজদের এদেশে আগমন ঘটে বণিক বেশে।সেই থেকে শুরু হয় পরাধীনতার ইতিহাস,অপরদিকে মুক্ত আবাস ভূমির জন্য গৌরবোজ্জল সংগ্রামের ইতিহাস।এখান থেকে ওখানে এক রুম থেকে অন্য রুমে হেঁটে বেড়ানো,আবেগ উন্মাদনায় প্রেম-ভালবাসার ভাগাভাগিতে দু'জনকে আপন করে নেয় দৃশ্যের পর দৃশ্য।এতক্ষণে সুমনা যেন ছেলে মানুষ হয়ে উঠে।ছেলে মানুষী খেয়ালী আচরণ।ইতিহাস চোখের সামনে তাকে বদলে দেয়।ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্বর্ণালী অতীতের কাছে।তাই সে বাস্তবকে ভুলে কল্পনা বিলাসী হতে চায়।নিজেকে উজার করে দিয়ে পেতে চায় নতুন কিছু।যন্ত্রনা কাতর হৃদয়ের হাহাকার নিয়ে দু'জন মিলে খুঁজে ফিরি ইতিহাসের অলিগলি।সেলুলয়েডের ফিতায় ভেসে উঠে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ,১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জ্বলে উঠা সারাদেশ।দ্রোহ আর সংগ্রামে সোচ্চার এদেশের মানুষ,ইংরেজদের ষড়যন্ত্র মুছে ফেলার অঙ্গিকার নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠে।বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত হয় মূলত ১৯০৫ সালে।তারআগে ১৮৩১ সালে তিতুমীরের যুদ্ধ ঘোষণা বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীনতার মন্ত্রে।এভাবেই এগিয়ে যায় মুক্ত আবাস গড়ার, নতুন মানচিত্র আঁকার স্বপ্ন।তারপর ১৯১৯এর ঘটনা।১৯২০/২১সালে মুসলিম লীগ নেতা মাওলানা মোহাম্মদ আলীর খেলাফত আন্দোলন।১৯৩০সালে মাস্টারদা সূর্যসেন অসীম সাহসিকতায় চটৃগ্রামে ইংরেজ শাসকদের অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে বিদেশী শাসকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়।১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা সেন চটৃগ্রামের পাহাড়তলীতে ইংরেজদের ক্লাব আক্রমন করেন।দেশপ্রের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি।তথ্য প্রকাশ হবার ভয়ে সায়ানাইড বিষ গ্রহণ করে নিজেকে উৎসর্গ করেন বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামে।--এসব সংগ্রাম আর ইতিহাসের দুয়ার ঘুরে ঘুরে হেঁটে আমরা চলে আসি আমাদের নিজেদের গন্ডিতে।আবেগ আর উচ্ছাস নিয়ে সুমনা নানান প্রশ্নে অস্থির করে তোলে।সামনের গ্লাসে ফ্রেমে আটা ছবিতে দেখা যায় ১৯৪৭সালের ভারত বর্ষের স্বাধীনতার ছবি।১৯৪৫ এর উত্তরবঙ্গের হাজং কৃষক বিদ্রোহ।তারপরই সেই ১৯৫৮ সালে জেননারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন।১৯৬৬তে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তথা তৎকালিন পূর্বপাকিস্থানে প্রথম প্রতিবাদ।এরই মাঝখানে আমরা দেখে আসি বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণার সাথে সাথে ফুঁসে উঠে সমগ্র জাতি।রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত সারাদেশ।১৯৫২ এর ২১ ফেব্রয়ারি মায়ের ভাষাকে রক্ষা করতে সেই ঐতিহাসিক মিছিল।শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে,এগিয়ে যায় বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। শহীদ সালাম,বরকত,রফিক বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে লিখে যায় বাঙালির প্রাণের বর্ণমালা অ,আ,ক,খ।এই বর্ণমালায় আমরা লিখি অমর কাব্য,প্রেম ভালবাসর কাহিনী।সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনা সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে আমাদের মায়ের ভাষা।আমাদের সকল আবেগ ধরে রাখার ইতিহাস রচনা হয় এই বর্ণমালায়।সুমনার সরল প্রশ্ন এতটা গৌরব এতটা ত্যাগ অহংকারের ইতিহাস কি আর কোন জাতির আছে?হঠাৎ তার এই প্রশ্নে বুকটা ভরে উঠে অজানা ভাললাগায়।তাকে কাছে টেনে বলি,এদেশের মাটি,জল,সাগর,পাহাড়,নদী,ঝর্ণা,রোদ,বৃষ্টি,বন,বনানী,প্রকৃতির অপার রহস্য,প্রেম ভালবাসার অকৃত্রিম ভান্ডার।পদ্ধা,মেঘনা,যমুনাসহ হাজার নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এদেশের মানুষ জন্মগতভাবেই বাউলের জাত।তারা যেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বালতে পারে,তেমনি পারে প্রেম ভালবাসার জন্য হাসতে হাসতে জীবন উৎসর্গ করতে।সে জন্যই আজ বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত আমাদের মায়ের ভাষা।বাংলা আজ দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে।ডানপাশের রুমটিতে ঢুকেই পেয়ে যাই১৯৬৮ সালের আগরতলা ষঢ়যন্ত্র মামলাসহ ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও৭০ এর সাধারণ নির্বাচনের ছবি।১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির প্রাণের স্পন্দন হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্থানের স্বায়ত্বশাসন দাবি করে ৬ দফা ঘোষণা করেন।তাই পাকিস্থানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষঢ়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।সেই আন্দোলনই ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা আসাদ শহীদ হন।আসাদের রক্তমাখা শার্ট বাঙালির আদর্শের পতাকা হয়ে ৬৯ এর গণআন্দোলনের বিজয় এনে দেয়।তারপর ৭০ এর সাধারণ নির্বাচন।সেই অগ্নিঝরা দিনের ছবি।বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন।পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে জেগে উঠা সেই উত্তাল দিনের কথা। স্মৃতির পাতায় লেখা রয়েছে কাঁচের গ্লাস মোরা ফ্রেমে।সেই বজ্রকন্ঠ 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম'। রেসকোর্স ময়দান জুড়ে লক্ষ জনতার স্রোত-ফুঁসে উঠা সমগ্র জাতি রেডিও টিভির সামনে।মুহুর্মুহু শ্লোগান 'পদ্ধা,মেঘনা,যমুনা 'তোমার আমার ঠিকানা' বীর বাঙালি অস্ত্র ধর' বাংলাদেশ স্বাধীন কর 'জয় বাংলা'।সারা জাতি মন্ত্রমুগ্ধ।'সাতকোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবানা'।তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়।' সেই একটি ভাষণ,ইস্পাত দৃঢ় লৌহ কঠিন শপথ যা বাঙালি জাতিকে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনুপ্রেরণা যোগায়।৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে ভেসে ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একটি স্বাধীন জাতিসত্বার নাম লেখা হয়।একটি স্বাধীন ভূখন্ড,একটি মানচিত্র,একটি পতাকা,একটি জাতীয় সঙ্গীত এই আমাদের বাংলাদেশ।নিঁখাত দেশপ্রেমের গভীর অনুভূতি নিয়ে আমরা দু'জন পায়ে পায়ে হেটে বেড়াই অন্য মানুষ হয়ে।যেন এক পূণ্যভূমি।এই আমাদের অহংকার আমাদের অর্জনআমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন এবং অনুপ্রেরণা সামনে চলার।দু'তলার পূর্বপাশে ঢোকার আগেই থমকে দাঁড়ায় সুমনা।আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় পশ্চিম পাশের রুমের কাছে।ভিতরের বড় রুমটাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রামান্য চিত্র দেখানো হচ্ছে।ভেতর থেকে শুনা যায় সেই গানের কলি।'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, 'মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।'সুমনা এবার অশ্রুভেজা চোখে তাকায়, ধরে আসা কন্ঠে বলে আমার বাবা একটি ফুলকে বাঁচাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছিল।আজ স্বাধীন দেশে হায়েনার দল কত ফুল দুমড়ে,মুচড়ে,নোংরা আবর্জনায় ফেলে পায়ের নীচে ফেলে পিষে ফেলছে।৭১ এর সেই দুর্বৃত্তরা আজো সমাজের ফাঁক-ফোকড়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠত করে তাদের দুষ্কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।এবার আমরা ঢুকে পড়লাম দু'তলার পূর্ব পাশের কক্ষে ঢুকেই প্রথম সেই ছবিটা শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে যাওয়া সেই তরুণীর, যশোর জেলার খেজুরতলা গ্রামের সেই তরুণীকে এ দেশীয় দোসর রাজাকার ও পাকবাহিনী মিলে গণধর্ষণের পর হত্যা করে ফেলে রেখে যায়।তার আলোকচত্র, সেইসব ভয়াল জঘন্য দিনের কাছে নিয়ে যায় আমাদের।এখানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের বিভিন্ন সেক্টরের গ্রাফ, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহারের জিনিষপত্রগুলো সংরক্ষিত।এখান থেকে বেরিয়ে আমরা যাই প্রামান্য চিত্র দেখতে।সেই যুদ্ধ সংগ্রাম শেষে একজন যোদ্ধা ফিরে আসে তার মুক্ত স্বদেশভূমিতে।সেখানে সবুজ ধানের মাঠে বাতাসের ঢেউ তোলা এক উদাস খেলা।মাঠের পাশে একটি বিশাল গাছের ছায়ায় বসা অস্ত্র হাতে সেই যোদ্ধা। নিজেদের আমরা হারিয়ে ফেলি সেই মাঠের প্রান্তে।চলে যাই মেঠোপথে। অন্তহীন পথ চলার ক্লান্তিতে আগামীর স্বপ্ন বুনে যাই।এসময় যাদুঘরের সাউন্ড সিস্টেমে ভেসে আসে সূরের মুর্ছনা---ও আমার দেশের মাটি,তোমার বুকে ঠেকাই মাথা।তিন ঘন্টায় অনেক স্মৃতির দুয়ার ঘুরে বেরিয়ে আাসার সময় ভেজা চোখ দু'জনার।এরই মাঝে ফোটায় ফোটায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ে মাটিতে।হৃদয়ে বেজে উঠে সেই সূর 'যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা,তোরা দে-না,দে-না সে মাটি আমার অঙ্গে মাখিয়ে দে-না।