দমে গেলে চলবে না! আমরা ছাড়া আলো জ্বলবে না।

মোঃ জামাল হোসেন

দমে গেলে চলবে না! আমরা ছাড়া আলো জ্বলবে না। ২০১১ সালে আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ি তখন ব্র্যাক এর একটি তারায় তারায় দীপশিখা জেলা বিভাগ পেরিয়ে কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে ঢাকায় অংশগ্রহন করার সুযোগ পাই।কিন্তু কবিতা আবৃত্তি করার সময় ভুল উচ্চারণ ও আঞ্চলিকতা আসায় আমি জয়ী হতে পারিনি। বিচারক স্যারেরা একটি কবিতার বই এর কথাও বলেছিল, কিন্ত অনেক খোঁজা খুঁজির পর ও খুঁজে পাইনি কবিতার বইটি। কারন আমার এলাকায় কোন পাবলিক লাইব্রেরী ছিল না। আমি সেদিনেই স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি যদি এলাকায় একটি লাইব্রেরী করতে পারতাম। সেদিন থেকে টিফিনের টাকা জমিয়ে মাটির ব্যাংকে জমাতে শুরু করলাম। ২০১৪ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে ৭৫০ টাকা দিয়ে ১০ টি বই নিয়ে শুরু করলাম নিজ বাড়ি থেকে পাঠাগার। নাম দিলাম সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগার। দিনে দিনে যখন পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগলো তখন বাড়ি থেকে ৩ কিঃ মিঃ দূরে একটি ঘরে পাঠাগার স্থানন্তর করলাম। রাত জেগে বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করে বই সংগ্রহ করি, এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরাতন বই সংগ্রহ শুরু করি। বন্ধুদের সহযোগিতায় অনেক সংগ্রাম ত্যাগ সিকার করার পর ফসল হিসাবে এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার বই করতে পেরেছি।পাঠাগারে এখন প্রচুর পাঠক বই পড়তে আসে, বই বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি নিজ উদ্দ্যেগে প্রত্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাগার তৈরি করে দিয়েছি, যা অনেক পাঠক উপকৃত হচ্ছে। পাঠকের দাড়গোড়ায় বই পৌছে দিতে, অভিনব কায়দায় বাংলাদেশ ২০১৭ সালে ৩০ টি সেলুন লাইব্রেরী চালু করি। যা প্রচুর পাঠক সাড়া পেয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ডেইলিস্টার পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার নিউজটি দেখে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেন যে সারা দেশে যাতে মুজিব শতবর্ষে সেলুন লাইব্রেরী ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অর্থায়নে সারাদেশে ১০০ টি সেলুন লাইব্রেরি সরকার চালু করেছেন, প্রতিটি সেলুন লাইব্রেরিতে ১৭ টি করে মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর বই পেয়ে পাঠক সমাজ খুবই খুশি। বর্তমানে ব্যক্তি উদ্যোগে আমার পরামর্শে ক্রমে প্রায় ১২৩৪ টি সেলুন লাইব্রেরী গড়ে উঠেছে। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলা প্রথম আমি সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগারটি গড়ে তুলি। ঘর ভাঙ্গা পানি পড়ে অনেক বই নষ্ট হয়েছে পাঠাগারের। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্টে বইয়ের প্রতি ভালবাসায় বাবার কাছ থেকে ৪ শতাংশ জমি পাঠাগারের নামে লিখে নেই।ঘরের জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করতে করতে যখন আমি চাতক পাখি, তখন সৃষ্টিকর্তার কৃপায় নুরেলা আক্তার সহ অনেকের সহযোগিতায় নির্বাহী স্যারের আন্তরিকতায় এডিপি থেকে ২ লক্ষ টাকা পাই এবং ডিসি মহোদয় ও নির্বাহী স্যার দের অনুরোধ করে নিয়ে এসে এলাকার লোকজনকে সাথে নিয়ে ৫ জুন ২০২১ তারিখে ৩ তলা ভিত্তি দিয়ে পাঠাগারের ভিত্তি প্রস্তর করি। ১১ টি পিলার বর্তমানে মাতা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। ডিসি স্যার ২ লক্ষ টাকা দিয়েছে। বর্তমানে পাঠাগারের কাজ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে ৫০ বছর পূর্তিতে আমার স্বপ্ন সোনার বাংলা বির্নিমানে ৬৮ হাজার গ্রামে হবে ৬৮ হাজার পাঠাগার । আমি বিশ্বাস করি প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে কোন বাধাই দাড়াতে পারে না।