ধৈর্য্য ও বিজয়

রাফিজা নওয়াজ রিয়াকা

আমি রাফিজা নওয়াজ (রিয়াকা)। আমার বয়স ১৩ । আমি সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিটি মানুষের জীবনে কোনো না কোনো ছোট-বড় বিজয়ের ঘটনা থাকে। আজ আমি আমার জীবনের এমনই একটা ছোট বিজয়ের গল্প আপনাদের কাছে শেয়ার করবো। আমার পড়ালেখা করতে ভালোই লাগে । স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতেও অনেক ভালো লাগে। তাই আমি নিয়মিত স্কুলে যাই। ছোটবেলায় মীনা কার্টুনে দেখেছি মীনা বলে, "স্কুল আমার খুব ভালা লাগে।" তা থেকেই মনে হয় আমি নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। অসুস্থ হলে আব্বু-আম্মু স্কুলে যেতে নিষেধ করলেও আমি স্কুলে যাই। আমার কাছে মনে হয় স্কুলে না গিয়ে বাসায় বসে বোরিং সময় কাটানো খুবই কষ্টকর। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমার সমাপনী পরীক্ষার আর এক মাস বাকি। আমি স্কুলে ক্লাস শেষে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমি দেখলাম আমার সামনে অন্য ক্লাসের কিছু মেয়েরা ছোটাছুটি করে খেলাধুলা করছে। হঠাৎ করে দ্রুত গতিতে একটি মেয়ে আমার দিকে ছুটে আসলো। আমি কিছু বোঝার আগেই ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। আমি তখনো ভালোভাবে বুঝতে পারিনি আমার সাথে ঠিক কি হয়েছে? আমি আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করি । না,আমি পারছি না ! আমি আমার পায়ে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছি। আমার কিছু বন্ধুরা আমাকে বলল, "তেমন কিছু হয়নি একটু হাটাহাটি করার পর ঠিক হয়ে যাবে।" সেটা শোনার পর আমি হাঁটতে চেষ্টা করি কিন্তু কিছুতেই আমি হাঁটতে পারছি না। তারপর সবাই ক্লাসের স্যারকে খবর দেয় । স্যার আমার অবস্থা দেখে আব্বুর কাছে ফোন দেয় । তারপর আব্বু আমার স্কুলে এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে ডাক্তার আমার পায়ের অবস্থা দেখে জানালো, "আমার পায়ের হাড়ে Sever Damage হয়েছে। আমাকে তিন মাসের বেডরিডেন থাকতেই হবে। এই তিন মাসে আমি আমার পায়ের ওপর কোনো প্রেসার দিতে পারবো না । প্রেসার দিলে আমার পায়ের হাড় আর জোড়া লাগবে না।" এটা শুনার পর আমি অনেক ভেঙ্গে পড়ি। তখন আমার মনে হচ্ছিল যে, "আমি কি আর স্কুলে যেতে পারবো না ? পরীক্ষা দিতে পারবো না?" আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করবো! পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। কারন বেশিক্ষণ বসে থাকলেই আমার পায়ের ব্যথা বেড়ে যেত। বাসার সবাই আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিতো।আমার পায়ে সবসময় অনেক যন্ত্রণা হতো। এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। সবচেয়ে বিভীষিকাময় ছিল বাথরুমে যাওয়া ও গোসল করা। এত কষ্টের পরও আমি আমার সাধ্যমতো পড়ার চেষ্টা করি। তারপর এক মাস পর আমি পরীক্ষা দিতে যায়। আব্বু-আম্মু আমাকে ধরাধরি করে পরীক্ষার হলে নিয়ে যেত। আড়াই ঘন্টার পরীক্ষা আমার শুধু মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষা ছিল না আমার ধৈর্যের পরীক্ষাও ছিল । যেহেতু আমার পায়ে প্লাস্টার করা ছিল তাই আমার পায়ে চুলকাতো আর অসহ্যনীয় কষ্ট হতো। তারপর শত কষ্ট পেরিয়ে আমি সমাপনী পরীক্ষায় A+ পেয়েছিলাম। জীবন যুদ্ধে থেমে থাকলে চলবে না। হার-জিত জীবনের অবিচ্ছদ্য অংশ। হার থেকেও জীবনের অনেক কিছু শেখার আছে।