Meghla Meghla
শিমুর আজ বিয়ে। বাড়িতে বেশ তোড়জোর চলছে। দেশের যা পরিস্থিতি তাতে কারোর মনে তেমন আমেজ নেই, নিতান্তই বিয়েটা না দিলেই নয় এমন অবস্থা আর কি। শিমুর ভাই শিহাবকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় ছয়মাস হলো। নিখোঁজ হওয়ার পরে যখন খোঁজাখুঁজি শুরু হলো কেউ কেউ বলেতে লাগলো শিহাব নাকি মুক্তিবাহিনীর দলে যোগ দিয়েছে। অনেক খবর নেওয়ার চেষ্টার পরেও শিহাবের খবর আর শিহাবের বাড়ি পর্যন্ত আসলো না, শিহাব এখনও নিখোঁজ........ শিমু বৌ সেজে বসে আছে। শিহাবের কথা খুব মনে পরছে। শিহাবের থেকে শিমু একটু বড় হলেও তাদের মধ্যে ঝগড়া খুনশুটি প্রায় লেগেই থাকতো। শিহাব ছোট হলেও শিমুকে খুব কড়া শাসনে রাখতো। ছোট ভাই হয়েও বড় ভাইদের মতো শাসন করতো। একবার পাশের গ্রামে গিয়েছিল বিয়ে বাড়িতে, বাড়ি আসার পরে শিমুকে বলে, "বুবু, বৌ টা দ্যাখতে কি ভালা আছিল।" তুই যে দিন বৌ সাজবি তোকেও সেদিন খুব সুন্দর লাগবো। তোর বিয়াতে অনেক মজা করমু। আবার বলে উঠে," বুবু তুইও ঐ নতুন বৌয়ের মতো আমাদের ছাইরা চয়ল্লা যাইবি ???? তখন আমি কারে জ্বালামু? কার লগে কথা কমু? আমার তখন খুব খারাপ লাগবো বুবু............. শিমু কথাগুলো মনে করতে থাকে আর কান্না করতে থাকে। কতদিন হলো শিহাবের মুখে বুবু ডাকটা শুনেনি শিমু। মিলিটারিরা একবার হানা দিয়েছিল গ্রামে শিহাব সেদিন বলেছিল সে বাংলাদেশকে মুক্ত করবে ঐ নরপিশাচদের হাত থেকে। শিমু হেসে বলেছিল," তুই তো সবকিছুতেই ডরাস...... তোর দ্বারা হইবো না। শিহাব: আমি কি পারি সময় আইলে দেইখা লোস। শিমুর হঠাৎ মনে পরে তাহলে কি শিহাব সত্যি মুক্তিবাহিনীর লগে যোগ দিতাছে!!!!!! শিমুর ভাবনার ঘোর কাটতে না কাটতে বরযাত্রী এসে হাজির। বিয়েটা কোনোরকম সম্পূর্ণ হলো। শিমুও চলে গেল শশুড়বাড়ি। শিহাবের মা শিহাবকে খুঁজতে থাকে এখনো কিন্তু কোথাও খোজ মেলে না। ১৬ ডিসেম্বর, বিকেলে খবর আসে পাকিস্তানি মিলিটারিরা নাকি আত্মসমর্পণ করেছে। অনেক জন নাকি পালিয়েও গেছে। এখন থেকে বাংলাদেশ মুক্ত। ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। গ্রামছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই ফিরে আসে কিন্তু শিহাব আর ফেরেনা। শিহাবের মা এখনো শিহাবের অপেক্ষায় প্রতিয়মান । বোনও ভাইয়াকে নিয়ে কল্পনার সমুদ্রে বিচরণ করে । কিন্তু শিহাব এখনও ফিরে আসেনি। এই অপেক্ষার প্রহর হয়তো শেষ হওয়ার নয়। #মুনজারিন_মাহবুবা_মেঘলা।