রাইমার মোঃ মাসুদ রানা
"নীলপদ্ম" মোঃ মাসুদ রানা আজ প্রথম সিগারেট খেয়েছি। মাথা টা ঝিম ঝিম করছে। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি মাথা ঘুরে পরে যাই। গভির রাত পায়ে হেটে বাসার দিকে আসছি। রাস্তার দক্ষিণে গুন গুন আওয়াজ। ভয় পেয়ে গিয়েছি, এত রাতে কিসের আওয়াজ হতে পারে। ভাবছি আর সামনে যাচ্ছি। ওমা লেচুর গাছে কে যেনো বসে আছে। সাহস করে মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম কে? কে আপনি? আমি নীল, মাসুদ ভাইয়া নাকি? হ্যা, তুই এত রাতে কি করছিস? বসে আছি! আজব তো! কি হয়েছে তোর কন্ঠ ভারি কেন? না ভাইয়া কিছু না। একটু মন খারাপ। তবে, আমি আগে থেকেই জানতাম নীল কোনো একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে। নিশ্চয় কিছু হয়েছে। আচ্ছা তোর ওর কি খবর? ঝগড়া করছিস নাকি? না ভাইয়া, তবে একটা সমস্যা হয়েছে। ওর সাথে আমার এখন আর কথা হয় না। ধুর তাই বলে কি মন খারাপ করে থাকবি? আচ্ছা, আপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছিলেন? না। তাহলে আপনি বুঝবেন না। আমি আশ্চর্য! তো ঘরে যা, এখানে তো মশা কামড়াচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, মশা। "মশার কামড়ে কিচ্ছু হয় না! আমার ভিতরে যে জ্বালা পোড়া তা ঘরে গেলেও কমবে না"। তাই নাকি? তোর কি হয়েছে বলতো? আমায় তো বিশ্বাস করিস? হু। ও আর নাই, তবুও আছে। মানে? খুব কোমল স্বরে বললো, আমি না ওর স্মৃতি গুলো মুছে ফেলতে পারছি না, এই লেচুর গাছে, ও যেনো মিশে আছে। এই যে শুপারির বাগান, বিদ্যুৎ তিক পোল, বাঁশঝাড় এস কিছুই যেনো তার কথা বলে। আমি আজ কত দিন থেকে ঠিক মত ঘুমাই না,খাই না। দিন যাচ্ছে কিন্তু তাকে পাচ্ছি না। জানেন ভাইয়া, এই জায়গা গুলো খুব পরিচিত, খুব আপন মনে হয় । আমায় ঘুমোতে দেয় না, খেতে দেয় না বার বার কাছে টানে। আমি অনেক কথা বলি, ও শোনে কিন্ত কিছু বলে না। অনেক রাত ওর সাথে এখানে বসে কত কথা বলেছি, হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে। আমার কিছু ভাষা তার ভাষায় মিশে যায়। আমার মা ডাক টা তার খুব ভালো লাগতো। প্রায় সময় আমায় বলতো তোমার আগে যেনো আমার মৃত্যু হয়। আমি খুব রেগে যেতাম, এই সব কথা এক দম বলবি না ফাজিল। মাসুদ ভাইয়া, আপনি হয়তো জানেন কিনা জানি না। ভালোবাসার মানুষ টি হালকা অভিমানী কন্ঠে যখন তুই করে বলে, বেশ লাগে। আমি প্রায় সময় তাকে তুই তুকারি করে'ই বলতাম অন্যদের মত তুমি করে বেশি বলতাম না। তুই করে বলাতেও ভালোবাসার কোনো কমতি হয় নাই। মাঝে মধ্যে আপনিও বলতাম বেশ ভালো লাগতো। সে আমার উপর কখনো রাগ করে নি, আর আমি'ই হুদাই হুদাই ইচ্ছে করে ঝগড়া করার চেষ্টা করতাম ওর সাথে। কিন্তু ও এমন কিছু কথা বলতো রাগ তো দূরের কথা, না হেসে পারতাম না। মাঝে মধ্যে, ও ইচ্ছে করেই এমন কিছু কথা বলতো যাতে রাগ করি, আর ও কে বকা দেই। আমার বকা শুনতে তার নাকি খুব ভালো লাগতো। তখন থেকে শুধু ও, ও বলছো আচ্ছা ও টার নাম কি? আমার কথা শুনে নীল মৃদু হেসে.. বললো। পদ্ম, পদ্ম ওর নাম। ওয়াও বিউটিফুল নেম। হুম। তারপর কি হলো, একদিন খুব রেগে যাই পদ্ম তখন রাগ টা দমিয়ে দেয় এবং বলে আমি রাগ উঠাইবারো মেসিন - রাগ কমাবারও মেসিন। কথা টা খুব ভালো লেগেছিলো, প্রায় সময় বলতাম রাগ কমানোর মেসিন টা কই? দু জনে খুব মজা করতাম। কিন্তু আজ সে কোথায়? আমি কোথায় কেউ জানি না। এক দিন কথা না বলে থাকতে পারতাম না, অথচো আজ ৫০ বছর থেকে কোনো কথা হয় না। আত্মহত্যা মহা পাপ, তাই বেঁচে থাকতে হয় বলেই বেঁচে আছি। কিন্তু কয়েক হাজার কোটি বার আমার আত্তার মৃত্য হচ্ছে। আমি জানি এই মৃত্যুর যন্ত্রণা কত প্রখর। তবুও তার স্মৃতি গুলো আকরে ধরে বেঁচে আছি। সে শিখিয়ে গেছে..ভালো শুধু কাছে থেকে বাসা যায় না, দূরে থেকেও বাসা যায়, যদি সেটা ভালোবাসা হয়। সব ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যায় না, কেউ হারিয়ে গিয়েও রয়ে যায়। সব ভালোবাসার বাসর ঘর হয় না, কিছু ভালোবাসার বাসর কলিজাতেও হয়। সব স্পর্শ দেহতে দাগ কাটে না কিছু আত্তায় ও কাটে। নীল তোর পদ্মর সাথে এমন কি ঘটেছিলো যার জন্য সে আর তুই এক নাই। অথচো আজও তুই তাকে মনে করে কাঁদিস? বৈষম্য! ধর্মের বৈষম্য ছিলো। এখন আর আগের সময় টা নাই, চুল দারি পেকে গেছে। একটা মৃত্যু হয়তো জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাবে। তবুও দীর্ঘ কয়েক বছর পর.... আজ যখন তার সাথে দেখা হয়ে ছিলো, বুকের পাঁজর টা যেনো দুমড়ে মুছড়ে গেলো। এই বুঝি আমার মৃত্যু হল। নিজে কে মানাতে পারছিলাম না, দুটি কথা জিজ্ঞাস করতে খুব ইচ্ছে করছিলো.... মোঃ মাসুদ রানা নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ । অনার্স ২ য় বর্ষ, বাংলা বিভাগ উপজেলা. নাগেশ্বরী, জেলা. কুড়িগ্রাম, বিভাগ. রংপুর। মোবাইল নাম্বার.. 01701871900 01701871840