সুদ মুক্ত ঋণে স্বাবলম্বী করার গল্প

মোঃ আফসারুল আলম মামুন

আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করি, তখন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন NGO প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার গল্প শুনতাম। সেখানে তারা কিস্তি বিষয়ক বিভিন্ন কথা বার্তা বলত। সেখানে থাকত ভাত খাওয়ার চাল না কিনে কিস্তির টাকা দেবার গল্প, সেখানে থাকত অসুস্থ মা বাবার ওষুধ কেনার পরিবর্তে কিস্তির টাকা দেবার গল্প। কারণ কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে সুদের পরিমান বেড়ে যেত। আর এক সময় সুদ এবং আসল মিলে টাকার পরিমাণ এত বড় হতো যে সেটা পরিশোধ করার কোন রাস্তা থাকত নাহ। এই গল্প গুলো আমাকে মারাত্মক ভাবে কষ্ট দিত। মনে মনে ভাবতাম এই সিস্টেম টা পরিবর্তন করা দরকার। তখন থেকেই কিছু একটা করার ভাবনা মাথায় আসে। তো একসময় এই সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থার বিষয়টি মনের ভিতর গেঁথে যায়। স্কুল পড়াকালীন মনে হয়েছিল কলেজে উঠে এই নিয়ে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু কলেজে এই নিয়ে কোন ভাবেই আগানো যায় নি। অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ১ম বর্ষের শেষের দিকে আমার পরিচিত জনের সাথে জিনিসটা শেয়ার করি এবং সবাই আইডিয়া শুনে খুশি হয় এবং সংগঠনে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে। তারপর মহান আল্লাহ পাকের করুনায় দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতে ১২ জন সদস্য নিয়ে শুরু করি একটি সংগঠন। নাম দেই ইক্বলাব ফাউন্ডেশন। সংগঠন শুরু করার পর গত দেড় বছরে মধ্যে আমরা আটজন অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে সক্ষম হয়েছি। প্রথম ব্যক্তি হচ্ছে আমাদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়শোনা শেষ করা এক বড় ভাই। ভাই টিউশনি করে নিজের খরচ এবং পরিবার কেও সামান্য সহযোগিতা করত। কিন্তু হঠাৎ করে টিউশনি না থাকায় সে মারাত্মকভাবে অর্থ সংকটে ভোগে। খাবার দোকানে বাকি সহ মেস ভাড়া অনেক হয়ে যায়। তখন আমরা তাকে ঋন দেয়ার মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো শেরপুর সদরের জংগলদী নতুন পাড়ার এক বাসিন্দা। সেখানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করা এক ভাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে গরুর কিনার জন্য আমরা কিছু টাকা ঋণ হিসাবে দেই। তৃতীয় ব্যক্তি হলো শেরপুর জেলা সদরের লতারিয়া এলাকার এক ঝাড়ু বিক্রেতা। তাঁর ছেলের অসুস্থতার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু টাকার প্রয়োজন ছিল। তখন তাকে আমরা ঋণ হিসাবে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করি। এইভাবেই হাজারো উপাখ্যানে তৈরি হয়েছে আমাদের বাকি পাঁচটি গল্প। এই টাকা গুলো সুদ মুক্ত ঋণ হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। এবং ঋণ গ্রহীতাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে টাকাটা ফিরত দেবার জন্য। এই সুদ মুক্ত ঋণ পেয়ে তারা খুব খুশি। আর এই আটটি ঋণের মাধ্যমে আমরা আটটি বিজয় অর্জন করেছি বলে মনে করি। যে বিজয়ের মধ্যে আছে সর্বোচ্চ আত্মতৃপ্তি।