মোঃ মেহেদী হাসান
নওপাড়া গ্রামে ছোট্ট একটি পরিবার বাস করত। বাবা ছিলেন পাকিস্তানের রেল বিভাগের এক সিপাহী। ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশেন ছিল তার পোস্টিং । তার নাম ছিল লিয়াকত মিয়া। চাকুরির ২২ দিন পরেই লিয়াত মিয়া ঘরে মিষ্টি একটা বউ নিয়ে আসে। কিছুদিন পরেই কর্মস্থলে ফিরে যায় লিয়াকত।তখন পুরো পাকিস্তান বেশ উত্তাল। ঢাকায় মিছিল হচ্ছে প্রতিদিন। বেশি ছুটিও ও পাচ্ছে না বাড়ি যাওয়ার জন্য, বেশ বিষন্নতায় মাসের পর মাস যাচ্ছে লিয়াকত আলীর। হঠাৎ রেলওয়ে অফিসের টেলিফোনে ফোন আসে লিয়াকত মিয়ার নামে। সে নাকি বাবা হতে চলেছে!লিয়াকতের মন বাড়ি যাওয়ার জন্য ছটফট করছিল।হঠাৎ ঢাকার মতো ঈশ্বরদীতে ও অনেক মিছিল হতে শুরুতে হয় সেখানে পাকিস্তান বাহিনীর নির্মম বর্বরতার গুলিবর্ষণে লিয়াকত মিয়ার মৃত্যু হয়।লিয়াকতের পরিবারের সব সদস্যের পায়ের নিচে থেকে এ যেন মাটি সরে গেল খরটা শুনে বিশেষ করে ওর পোয়াতি বিবির ।কদিন বাদেই পরিবারে এলো আরেকটি খুশি ছোট্টো ফুটফুটে এক ছেলে।তার নাম রাখা হলো বিজয়।ছোট্ট বাচ্চা বিজয় কে পরিবারের পেয়ে তারা নতুন ভাবে বাঁচতে শুরু করে।পুরো পরিবার অভাবের মোধ্য এক বেলা খেয়ে যাচ্ছিল তাদের দিন।কিছুদিন পরেই লক্ষ্য করলো বিজয় সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না অনেকটা বাঁকা হয়ে হাটে।পরিবারের সবার মনে এ যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।এভাবেই অভাবের সংসার দুঃখ কষ্ট গুলোকে ভাগাভাগি করে নিয়ে দিনগুলো কাটাচ্ছিল। হঠাৎ দেশে যুদ্ধ শুরু হল। পুরো দেশে এক হৈ-হুল্লোড় লেগে গেল। সবাই বাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করল।সবার মুখে এই বুঝি পাকিস্তান আইলো।এমন সময় এই অভাবের সংসারের সবাইকে নিয়ে তারা কোথায় যাবে কেই নাই যে ওদের।মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে প্রতিদিন নাকি হাজার হাজার মানুষকে মেরে ফেলছে পাকিস্তানি বাহিনীরা। তারা কোনো উপায় না পেয়ে বিজয় কে সাথে নিয়ে নওপাড়াতেই থাকলো। হঠাৎ একদিন রাতে বিজয়ে বৃদ্ধ দাদা দাদি কে মেরে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনীরা আর বিজয়ের মাকে তাদের ঘাঁটিতে তুলে নিয়ে যায়।পঙ্গু বিজয় ১২ বছর বয়সে তার মা কে উদ্ধার করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সাথে যোগ দেয়।বিজয় ও তাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং করতে শুরু করে। তারপর তারা ঈশ্বরদী পাকিস্তানি ক্যাম্পে হামলা করে বিজয়ের মাকে উদ্ধার করে।আধার নগ্ন ছেঁড়া কাপড়ে রক্ত ছিটে ফোঁটা। কিছুক্ষণ পরেই স্লোগান এল জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা। বাংলাদেশ আজ থেকে স্বাধীন।চিৎকার করে বলে রাহেলা ছেড়া কাপড় গিট দিয়ে, স্বাধীনতা পেয়েছি ওরে বিজয় দেখ না দুচোখ খুলে। এভাবেই এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ে মায়ের গল্পের সমাপ্তি ঘটে। মোঃ মেহদী হাসান