Aysha khan
জীবনে চলার পথে আমাদেরকে নানা রকম সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেএে আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হয়।আর এই সংগ্রামে কেউ আমরা বিজয়ী হই কারো আবার সংগ্রাম করে যেতে হয় প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতি নিয়ত। তবে নারী হয়ে জন্ম নিলে এই সংগ্রাম যেন অনেক বেশী সংগ্রামী হয়ে যায়। আমার জীবনের একটি সংগ্রামের গল্প আজ শেয়ার করবো। "আমি তখন মাএ ইন্টারে ভর্তি হলাম।একবার বরিশাল গেলাম বেড়াতে, তখনকার ঘটনা, সেখানে এক আপুর সঙ্গে পরিচয় হলো। সেই আপু চমৎকার বাইক চালায় তখনকার জন্য এটা এক অন্যরকম চমকপ্রদ এক ঘটনা। ব্যাপারটা আমাকে খুব টানলো। আমিও শিখতে চাইলাম। আপু বললো তুমি প্রথমে সাইকেল চালানো শিখো।পারো তুমি? আমি বললাম না ''। আপু অভয় দিয়ে বললো-পারবা চিন্তা করো না। কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ ছিলো না।একটা মেয়ে শার্ট জিন্স পরে সাইকেল চালাবে,এলাকার মানুষ কি বলবে এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভাবনা। বাবাকে কোন মতে রাজি করাতে পারলাম না। সে একদম নাছোড়বান্দা। তারপর অবশেষে বললো- ইন্টারে A+ এনে দাও সাইকেল কিনে দিবো। অপেক্ষা ২ বছরের কিছু করার ছিলো না। দিন গুনতে থাকলাম। তবে এরই মধ্যে এক বান্ধবীর বাসায় লুকিয়ে লুকিয়ে রুমে রুমে হালকা পাতলা সাইকেল চালাতাম, ছাদে প্র্যাকটিস করতাম। তারপর ২০১৮ সালে রেজাল্ট দিলো A+ না পেলেও বাবা রেজাল্ট এ খুশি হলো।বাবা কিনে দিলো সাইকেল। এরইমধ্যে আশেপাশের মানুষের কত কথা, মেয়ে হয়ে সাইকেল চালাবে? ছি! লজ্জা শরম নাই নাকি। খুব মন খারাপ হতো,মাঝেমধ্যে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তাম তখন আম্মু সার্পোট দিতে।বাবা সার্পোট দিতো না। তারপর আস্তে আস্তে সাইকেল খুব চমৎকার চালানো শিখলাম। মানুষজন প্রথম প্রথম এই সেই অনেক কথা শোনাতে,বলতে বলতে হয়রান হয়ে একসময় বলা অফ করে দিলো।শুধু চোখ কুঁচকাতো দেখলে। তারপর একদিন বাবা কে বললাম, " বাবা আমাকে বাইক কিনে দাও..... বাবা রাজি হলো না।মেয়ে হয়ে বাইক চালাবো,তাকে অনেক মানুষ অনেক কথা শোনাবে। কিছু মানুষ তো বলতেই লাগলো এই মেয়ের বিয়ে হবে না। যাই হোক সিদ্ধান্ত হলো স্কুটি দিবে।বাইক না যেটাতে মেয়েরা ইজিলি বসতে পারে সেটাই কিনে দেওয়া হবে। মেনে নিলাম। পাশের বাসার এক আঙ্কেল আন্টি ছিলো।সাইকেল, বাইক এসবের প্রতি আগ্রহ দেখে আমাকে বাঁকা চোখে দেখতো। পছন্দ করতো না। একদিন ওনার মেয়ের অর্নাস ২য় বর্ষের ফাইনালের সময় পরিবহন ধর্মঘট চলছিলো,একটা বাস ও চলছিলো না।সেসময় অনেক লজ্জা সংকোচ নিয়ে বললো" আয়শা তুমি জান্নাত কে একটু পৌঁছে দিবে। দিলাম এক্সাম শেষে আমার নিয়ে আসলাম। বাসায় আসার পর আঙ্কেল বললো এতদিন তোমার অগোচরে অনেক কথা বলেছি মাফ করে দিও।আসলে মেয়েদের জন্য বাস-সিএনজির থেকে মেয়েদের জন্য স্কুটি নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। আমিও জান্নাত কে স্কুটি চালানো শিখবো। আমার জীবনের সংগ্রামের গল্প এটাই ছিল। যারা আমাকে বাঁকা চোখে দেখতো, তারাই এখন আমার প্রশংসা করেছেন। মেয়ে বলে পিছিয়ে থাকতে নেই। এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না বলে ডি মোটিভেট করলেও দৃঢ় সংকল্প আর মনোবল থাকতে হবে। একটা মেয়ে সব পারে ট্রাভেলিং,রান্না, সাইক্লিং।বাঁধা আমার জীবনেও এসে ছিল আলহামদুলিল্লাহ আমি পার করেছি।মনোবল শক্তি আর ইচ্ছে মানুষকে সব করতে সাহায্য করে। সংগ্রাম করে দেশ রক্ষায় যদিরা সাহায্যে করতে পারে। তাহলে জীবনের সংগ্রামে নারীরা অব্যশই একদিন জয় লাভ করবে। একদিন আমাদের দেশের সকল সংগ্রামী নারী জয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।