কুহেলিকার অবসান

সুফিয়ান রায়হান

পৌষের শীতের সকাল, পরীক্ষা থাকাতে বেশ ভোর বেলা বেরিয়ে পড়লাম। তখনো পাখিরা জাগেনি। আমি মানুষ দেখেই জেগে ছিলাম। মরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? মগবাজার ওয়ারলেস এসে দাড়িয়ে রিকশা পেলে এগুতে থাকবো যাত্রাবাড়ীর দিকে। মানুষজন তেমন বেরোয়নি, একজন ফেরিওয়ালাকে দেখলাম কাধের মরিচ আর আদার ঝুড়ি রেখে ভয়ানকভাবে কাঁদছে আর বুক চাপড়াচ্ছে। আমার কাছে এসে কিছু বলতে চাইলেন, কান্নার জন্য কথা বের হচ্ছিলো না। দেখালেন কিছু হাত দিয়ে দেখলাম এক কিশোর, টোকাই, দৌড়ে পালাচ্ছে। আমি কিছু না ভেবেই দৌড় দিলাম তার পেছনে, ঐ ফেরিওয়ালা আমার টাকা আমার টাকা বলে আহাজারি করছিলেন। টোকাই বোতল কুড়ায়, আমি তার কাছাকাছি চলে যাওয়াতে তার বোতল কুড়ানো বস্তাটা আমার দিকে ছুঁড়ে মারলো, আমি পড়ে গেলাম রাস্তায়, ব্যস্ত রাস্তা হলে হয়তো আমি তখনই চাকার নিচে পড়তাম। আমি উঠে আবারো দৌড়ালাম। ততক্ষণে পৌছে গেছি মৌচাক। অবশেষে মৌচাক মোড়ে আমি তাকে ধরতে পারলাম। বয়সে গড়নে আমার চেয়ে বিস্তর তফাত হওয়াতে সে জোড়াজুড়ি করলোনা, আমি তার পকেট ঘেটে রাবারে বাঁধা টাকা পেলাম, বুঝলাম টাকাটি ফেরিওয়ালার। আমি তাকে কিছু করলাম না শুধু বললাম, মানুষের রক্ত ঘামের দামে টাকা একটা মানুষকে পথে বসিয়ে দিচ্ছিলো। ফিরলাম মগবাজার ওয়ারলেসের দিকে, ততক্ষণে তিনি কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়েছেন। আমি তার হাত ধরে উঠিয়ে টাকা গুলো তার হাতে দিলাম। তিনি দুহাত তুলে দোয়া করলেন। চোখের জল মুছে দিলাম, অনুমতি নিয়ে এই ছবিটা তুললাম। জানলাম, টাকাটা নিয়ে বাড়ির পথে যাচ্ছেন আরব আলী। আগামীকাল তার ছোট মেয়ের বিয়ে, টাকাটা না পেলে হয়তো বিয়েটাই হতোনা। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটেছে, আরব আলীর ও মুখে হাসি ফুটেছে। আমি এগিয়ে বাস ধরলাম, প্রচন্ড এক তৃপ্তি নিয়ে বাসে চড়লাম সেদিন। দুচোখে অনাবিল আনন্দের হাতছানি। এই আমার বিজয়। আরব আলীর মুখের হাসিই বিজয়, এক অন্যায় শনাক্ত করাই বিজয়। আরব আকীর মেয়ের সঠিক সময়ে বিয়েই বিজয়, এই সকালটাই বিজয়।