এই বিজয়ের মাসে একটাই চাওয়া দেশের জন্য যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়।

আবুসালেহ মোহাম্মদ মাঈনউদ্দীন

অচেনা মুক্তিযোদ্ধা। গ্রামের নাম হাসিলপুর।হাসিলেপুর গ্রামের চেয়ারম্যান জনাব কদম আলি।জনান কদম আলি খুবই সম্মানিত লোক।জনাব কদম আলির দুই মেয়ে।এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে,অন্য মেয়ে নবম শ্রেনীর ছাত্রী।জনাব কদম আলি তাদের গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা।কদম আলির বড মেয়ের জামাই তাদের এলাকার মেম্বার।কদম আলি তার বড মেয়ের জামাইকে খুব পছন্দ করত।একদিন কদম আলি তার মেয়ের শশুরবাডিতে যাচ্ছিলেন,পথে হঠাৎ দেখতে পেলেন,একটা পাগল টাইপের লোক বুকে পতাকা জডিয়ে বসে আছে।লোকটা শুধু বলতেছে খাব খাব, সব খাব।জনাব কদম আলি কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে গেল।যখন মেয়ের শশুরবাডিতে গেল,তখন তার মেয়ে তাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।এদিকে জামাইও শশুরকে দেখে বেশ খুশি হলো।জামাই বাজারে চলে গেলো শশুরের জন্য বাজার করতে,আর এদিকে কদম আলি তার নাতনিদের সাথে বসে বসে গল্প করতাছে।গল্পের এক পর্যায়ে-জনাব কদম আলির নাতনি হঠাৎ তাকে জিগগেস করল,নানা নানা মুক্তিযুদ্ধ কেমন ছিল?জনাব কদম আলি বলল ভয়াভহ।তার আরেকটা নাতি তাকে জিগগেস করল নানুভাই তুমি কি যুূদ্ধ করেছো?"হ্যা আমি যুদ্ধ করেছি" প্রতিউত্তুরে জনাব কদম আলি বলল।জনাব কদম আলি বলল তবে এখনো আমি স্বাধীন হতে পারিনি।তার নাতি আবার বলল নানুভাই তুমি কি বল এসব?বাংলাদেশ স্বাধীন হলো,আমরা স্বাধীন হলাম,আর তুমি স্বাধীন হলে না?এটা কেমন কথা।জনাব কদম আলি বলল ওটা তুমি বুঝবে না নানুভাই।কিছুক্ষন পর জনাব কদম আলির মেয়ে এসে বলল:"কি নানা নাতির মধ্যে খুব গল্প চলতাছে বুঝি।কদম আলির মেয়ে বলল, তোমরয় এখন যাও আমি তোমার নানুভাইয়ের সাথে কিছু কথা বলব।তারা খেলতে চলে গেল।তারপর কদম আলির মেয়ে জিগগেস করল;বাবা বাডির সবাই কেমন আছে?মা, টুম্পা ওদের কি অবস্থা?কদম আলি বলল সবাই ভালো আছে মা।কদম আলির মেয়ে বলল টুম্পাকে নিয়ে আসতে পারলেন না বাবা?কদম আলি বলল আমি ওরে আসতে বলেছি,ও আসেনাই।আচ্ছা বাবা আমি তোমার জন্য চা করে আনতেছি,তুমি বস,এ বলে কদম আলির মেয়ে চলে গেল।এদিকে কদম আলির মেয়ে জামাই বাজার থেকে অনেক বাজার করে নিয়ে আসল।কি বাবা কি কথা হচ্ছে? না বাবা এমনিতেই ওর সাথে কথা বলতেছিলাম।বস বাবা,তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে।কদম আলি বলল,বাবা আমি তো জরিনারে নিতে আসছি।নিতে এসেছেন তো নিবেন।তুমি যাবে না জামাইবাবাজি কদম আলি বলল।না বাবা আমার এলাকায় অনেক কাজ আছে,কদম আলি মেয়ের জামাই প্রতিউত্তরে বলল। পরদিন সকাল হলো।কদম আলির মেয়ে,নাতি সবাই য়াওয়ার জন্য প্রস্তুত।তারা যাওয়ার সময় আবার ঐ পাগল টাইপের লোকটাকে দেখতে পেল।লোকটা তখন বলতেছিল,খাব খাব সব খাব,রক্ত খাব,মাংস খাব।জনাব কদম আলির নাতি বলল, নানুভাই নানুভাই ওনাকে কেউ কিছু খেতে দেয়না?জনাব কদম আলি বলল ও কারো কাছ থেকে কিছু খায় না,তবে মাঝে মাঝে দোকান থেকে এটা সেটা নিয়ে খেয়ে ফেলে।কেউ কিছু বলেনা।কদম আলি সবাই এসব বলতে বলতে বাডি পৌছে গেল। এদিকে হাসিলপুর গ্রামের রাজাকার রহিম মিয়ার ফাসি হয়ে গেছে।চারদিকে খবর ছডিয়ে গেল তার য়ে ফাসি হয়েছে। কিছুদিন পর শহর থেকে সাংবাদিক এলো, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার জন্য।সাংবাদিকরা জনাব কদম আলির বাসায় উঠল।তার কাছ থেকে জানতে চাইল তাদের গ্রামে কতজন মুক্তি যোদ্ধা আছে।জনাব কদম আলি তাকেসহ হিসেব করে বলল,ছয়জন।তখন একজন সাংবাদিক বলল আপনাদের গ্রামের আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা আছে।স্বাধীনতার পর তিনি আপনাদের গ্রামে চলে আসেন।তবে লোকটা একটু পাগলাটে।সব কিছু হারানোর কারনে সে প্রায় পাগল প্রায় হয়ে গেছে।আর সে এখনও পাকিস্তানিদের ওপর আর রাজাকারদের ওপর এতই রাগান্বিত থাকে যে,সে সবসময় বলে, খাব, খাব সব খাব।কদম আলি সাংবাদিকের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন।তারপর কদম আলি বললেন, আপনারা আমার সাথে আসুন তাডাতাডি।তারা সবাই ঐ জায়গায় গেল যেখানে লোকটা সবসময় বসে থাকত।কিন্তু অবাক কান্ড সেখানে গিয়ে তার দেখা পাওয়া গেল না।জনাব কদম আলি কয়েকজন লোককে জিগগেস করল,এখানে যে একটা পাগল লোক ছিল তাকে আপনারা দেখেছেন?তারা বলল হ্যা দেখেছি তো।এইতো কিছুূদিন আগে যখন আমাদের গ্রামের রহিম রাজাকারের ফাসি হলো এরপর থেকে পাগলটাকে সারাক্ষন হাসতে দেখতাম। এরদুইদিন পর লোকটা যে কোথায় চলে গেলো আমরা কেউই জানি না।জনাব কদম আলি সাংবাদিকদের তার গ্রামের নাম জিগগেস করে তাডাতাডি গাডি নিয়ে লোকটার গ্রামে চলে গেল।তাদের গ্রামে গিয়ে কয়েকজন লোককে বলল আচ্ছা আপনাদের গ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আছে একটু পাগল টাইপের।আপনারা তাকে চিনেন তো?তারা বলল হ্যা চিনি তো।কদম আলি বলল তাহলে আমাদেরকে তার কাছে নিয়ে চলুন।তারপর কয়েকজন লোক বলল আপনারা আমাদের সাথে আসুন।লোকগুলো তাদের একটা নির্জন কবরস্থানে নিয়ে গেল। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করল আপনারা আমাদের কবরস্থানে কেন নিয়ে আসলেন?উনি কি কবরস্থানে থাকে নাকি?তারপর লোকগুলো মাথা নিচু করে বলল উনি পরশুদিন বিকালে আমাদের গ্রামে আসে আর ঐদিন রাতেই মারা যায়। তাদের এ কথা শুনে জনাব কদম আলি আর সাংবাদিকরা মূর্তির মতো দাডিয়ে রইল।