দাদার বিজয় যেন আমার বিজয়!

Md Atiq Ahnaf Sarker

আমার দাদা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা! মুক্তিযুদ্ধের সময় দাদা ছিলেন তারঁ বাবার একমাত্র সন্তান।তাঁদের কিছুই অভাব ছিলনা,অভাব ছিল একটা দেশের,একটা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব।একটা নির্দিষ্ট ভুখন্ড।দাদার তখন বয়স ২৫ এর উপর।দাদা সবেমাত্র পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন কিন্তু সেই সময় দেশে এক অরাজকতার সৃষ্টি হলো।"দেশে না থেকেও তাদের(পশ্চিম পাকিস্তানি) হাতে নাকি সকল ক্ষমতা!তারা বসতে বললে বসতে হবে,উঠতে বললে উঠতে হবে!!ভাবুন একবার,আপনি আপনার বাবার উত্তরসূরী হয়েও আপনি যেই ঘরে বসবাস করেছেন দীর্ঘকাল সেই ঘর নাকি আপনার হলেও আপনার না,সেই ঘর নাকি অন্য এলাকার এক লোকের,এটা কি কেউ মেনে নিতে চাইবে?তার আবার যেই ঘরে আপনার পরিবারের স্মৃতি রয়েছে,আপনার চোখের সামনে আপনার বসবাসের জায়গা থেকে আপনার মা কে বের করে দিচ্ছে, এটা কি কেউ মেনে নিবে?" এসব কিছু দাদা বলছিলেন। রেডিওতে শুনলেন বঙ্গবন্ধু নাকি ভাষণ দিবেন ঢাকায় এক বিশাল জনসভায়।দাদা বঙ্গবন্ধুকে অনেক ভালবাসতেন,তারঁ মতো দেশপ্রেমিক তিনি আর দেখেননি জীবনদশায়।দাদা সেই ভাষণে গিয়েছিলেন।দুইদিন আগে রওনা দিয়েছিলেন।সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু ডাক দিলেন স্বাধীনতার। দাদা গ্রামে এসে বাকি সব পরিচিতদের বললেন এবার নাকি মহা এক মৃত্যু যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।অনেকে ভয় পেয়েছিলেন কিন্তু দাদা ছিলেন অনঢ়।দাদা নিজ হাতে অস্ত্র তুলে নেন।যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় দাদা হাতের বাহুতে গুলি খেয়েছিলেন, তখন গুলির অনুভূতি কেমন ছিল তা বলার সময় দাদা বলেছিলেন,"তখন শীতকাল ছিল,গায়ে সোয়েটার,ঠান্ডা চারিদিকে,গুলিটা লাগার পর মনে হলো এক গরম লোহার টুকরা হাতের বাহুতে ঢুকে পুরো শরীরে গরম অনুভূতি দিলো"পরবর্তীতে সেই ক্ষত শুকাতে সময় লেগেছিল অনেক।সেই ক্ষত নিয়েও দাদা যুদ্ধ করেছিলেন।দাদা কে বলেছিলাম দাদা তখন কি এমন হয়েছিল এমন জান বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন,দাদা বলেছিল"তখন মনে একটাই বাসনা ছিল,জয় বাংলা!একটা যুদ্ধ,একটা বিজয়,,একটা স্বাধীন দেশ!!" দাদার সাথে পরিবারের খোজঁ ছিলনা অনেক দিন।নিতে পারেননি খোজঁ।শুধু চিঠি লিখতেন।জবাব আসতো,অনেক সময় সেটাও আসতোনা।দাদাকে যখন বললাম,দাদা,"দেশ বিজয় লাভ করার পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?দাদা বলেছিলেন,"সেই অনুভুতি বলে বুঝানো সম্ভব না,শুধু মনে হয়েছিল,হারানো মা কে পেয়েছি,হারানো বুকের ধন কে ফিরে পেয়েছি!" দাদা মারা গেছেন, কিন্তু ওনার বিজয়ের গল্প আমায় অনেক ক্ষেত্রে প্রেরণা যোগায়।মুক্তিযোদ্ধার বিশেষ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার থেকে লিস্ট চেয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের,কিন্তু দাদা সেই লিস্টে নাম দেননি,তিনি বলেছিলেন"দেশ স্বাধীন করেছি,কোনো কাগজে কলমে লেখার জন্য নয়,যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমার নাম এই দেশের মাটিতে থাকবে।" দাদার জীবনে ঘটে যাওয়া মুহুর্ত গুলো আমার সব কিছুতে প্রেরণা দেয়,আমি ভেংগে পড়লেই দাদার কথা স্বরণ করি,দাদা বলছেন,"ওঠো,লেগে থাকো,জয় তোমার হবেই,তোমার দাদার মতো অনেক মানুষের আত্মত্যাগে এই দেশ,ভয় কিসের?সব কিছু তো তোমাদের জন্য!" দাদার সেই সব কিছু মনে করে নতুন কাজ শুরু করলেই আমি জয় লাভ করি।আলহামদুলিল্লাহ আজ পর্যন্ত আমি কোনো কাজে ব্যর্থ হইনি।হারলেও শিক্ষা নিয়েছি,কিন্তু দিনশেষে বিজয়ের মুকুট নিয়েই বাসায় ফিরেছি!