পরিবর্তন

Shahrukh Ahmed

ছেলেটাকে দেখতাম রাস্তায়,মাঝে মাঝে দোকানে টাকা তুলতে দেখি,আবার মাঝে মাঝে রাত বিরাতে...... ঠিক ছেলে নয়, আবার মেয়েও নয়, তার চেয়ে মানুষ বলি এটিই সমিচীন মনে হয়। ভদ্দর লোকেরা এদের হিজরা বলে! সস্তা স্নো পাউডার আর লাল লিপস্টিক দিয়ে ছেলে থেকে মেয়ে হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে, হাসি হাসি মুখ করে মাঝে মধ্যে দেখা যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সাওয়ালাদের সাথে গল্প করে। আমি ভাবতাম গল্প না হয়ত, হয়ত ওরা কাজের কথা বলে। কখন, কোথায়, কত টাকায় এসব কথাই হয়ত হচ্ছে। ভদ্রসমাজ তাকে দেখে কামনায় জ্বললেও মুখে গালভরা গালি দিয়ে নাক সিটকায়। অভদ্র সমাজ তার কাছে গিয়ে দরদাম করে। আর আমি তাকে দেখে দেখে ভাবি, কতটা অসহায় হলে কেউ এমন পথে আসে! হয়ত তার বাবা নেই কিংবা অসুস্থ। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে হয়ত সে এই পথে আসছে যাতে তার ছোট ভাইবোনরা এই একটু খেতে পায় খারাপ কাজে যুক্ত না হয়,হয়তো কেউ কাজ দেয়না তাই। এমন হাজারো মেয়েও আছে আমাদের সমাজে, কিন্তু এমন ছেলে খুবই কম। যে মেয়েরা নিজের যৌবন লালসা মেটাতে অন্যের বিছানায় যায় তারাই প্রস্টিটিউট, খাটি বাংলায় বেশ্যা, আর ছেলে কিংবা কমোন জেন্ডারেরা? অভিজাতদের কাছে এসকর্ট। আমার কাছে এসব রাস্তার মানুষেরা, যাদেরকে আমরা খুব সস্তা ভাবি ঘৃণা করি, তারা হচ্ছে 'যোদ্ধা'। ----------------- ছেলেটা একদিন আমার দোকানে এসেছিলো, কথায় কথায় বলেছিলো দাদা, ""অভাবের তাড়নায় তো ছেলেরা হয় চোর ডাকাত,আর মেয়েরা হয় বেশ্যা! আর আমরা তো হিজড়া"" আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, 'চুপ করোতো, এসব বাদ দাও অন্য কথা বলো' __________________ সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর ছেলেটার ঐ কথাটাই শুধুমাত্র আমার মনে বারবার ভাসছিলো, "ছেলেরা খেতে না পারলে হয় চোর ডাকাত" আমি ভাবলাম আর কিছু করতে পারি আর না পারি এই হিজড়া মানুষগুলির জন্য কিছু করা উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ। পরেরদিন ওকে ডেকে বললাম "যদি কাজ দেই করতে পারবে?" ও বললো "পারবো দাদা" আমি ওকে আমার বোনের থেকে এনে কিছু জামা দিলাম সেলাই করার জন্য। আমি আগেই শুনেছিলাম সে নাকি ভালো সেলাই করতে পারে। এভাবে আসতে আস্তে প্রায়ই ২০জন হিজড়াকে কাজ দিলাম। আমি হয়তো পুরো দেশকে বদলাতে পারবোনা কিন্তু এভাবে আমার আশেপাশের মানুষগুলিকে বদলানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। যেন আর কেউ কোনো উপায় না পেয়ে এমন পেশা বেছে না নেয়। হিজড়াদের সাথে মেলামেশা নিয়ে আমাকে কম কথা শুনতে হয়নী আশেপাশের লোকজনের। তবে আমার মনে একটা তৃপ্তি ছিলো। আস্তে আস্তে অনেকজনই বুঝতে পেরেছিলো। আর অনেকজনই আমার এই কাজে সাহায্য করেছে।