ক্যামেরা

MD. ANAS

আমার একটা ক্যামেরা হবে, সুন্দর সুন্দর দৃশ্য গুলো ক্যামেরাবন্দী করবো এটা আমার শখ। ছোট ছেলে বলে অনেক কিছুই পাই, তবে বাবার আর্থিক দিকটাও চিন্তা করেছি। ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে একটা ক্যামেরা কিনে দিতে বললে হয়তো বাবা কষ্ট করে হলেও কিনে দিবেন কিন্তু ৬ সদস্যের পুরো পরিবারকে হয়তো এর কষ্ট সহ্য করতে হবে বেশ কয়েকটি মাস।তাই সাহস করে আর চাওয়া হয়নি। প্রতিদিন মাদ্রাসার টিফিন খরচ বাবদ ও যাতায়াত বাবদ ২০ টাকা দিতেন বাবা । তা খরচ না করে, হেঁটে হেঁটে যাতায়াত করে এবং ফুচকা বা সিংগারা না খেয়ে টাকা জমাতে থাকি। এছাড়াও আত্মীয়- স্বজনের বাসায় বেড়াতে গেলে অথবা আমাদের বাসায় আসলে আদর করে মজা কিনে খাওয়ার জন্য টাকাপয়সা দিতেন। সেগুলো খরচ না করে ক্যামেরা কেনার জন্য সবার দৃষ্টির অগোচরে জমিয়ে রাখতাম। একদিন টাকাগুলো গুনলাম ১৩ হাজার তিনশ পয়ত্রিশ টাকা । গাজীপুরা থেকে টংগী কলেজ গেইট হেঁটে হেঁটে ক্যামেরার দোকান গুলোতে দেখতে গেলাম কতো দামের মধ্যে সুন্দর একটি ক্যামেরা পাওয়া যাবে। দেখলাম, ১৮ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে ভালো ব্র্যান্ডের মোটামুটি ধরণের একটি ক্যামেরা পাওয়া যাবে । মনে মনে প্রস্তুতি নিলাম এই ক্যামেরাটি কিনবো তাই টাকা জমাতে থাকলাম। এক শীতের সকালে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলাম, আমি গেঞ্জি পড়েছি তার উপর পাঞ্জাবি তার উপরে সোয়েটার তার উপরে শাল জড়িয়ে নিয়েছি শীতের তীব্রতার কারণে। অথচ একটা বাচ্চা শিশুকে দেখলাম, খালি গায়ে রাস্তায় শুয়ে আছে। যা আমাকে অবাক করলো। সে জবুথবু হয়ে বসে আছে, বড় বড় মানুষ আছে যারা তাকে দেখেও দেখছেন না। আমি কি করবো? আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। আমার কাছে খুব খারাপ লাগছিল কেননা আমি এত কিছু পরিধান করার পরেও শীত শীত লাগছিল। আর তার একি অবস্থা? কি করবো ? কি না করবো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। মাদ্রাসায় চলে গেলাম। কিন্তু আমার মাথা থেকে চোখের সামনে দৃশ্যটা বার বার ভেসে উঠছিল।ক্লাসে বসে বসেই ক্যামেরা কেনার চিন্তা বাদ দিয়ে শীতে যারা কষ্ট করছে তাদের জন্য কম্বল কেনার চিন্তা করলাম। বাসায় গিয়ে সব টাকা গুলো একসাথে করে বিভিন্ন দোকানে দোকানে ভাংতি টাকা গুলো দিয়ে, টাকাগুলো নোট করলাম ৫০০ টাকার নোটে। ২৮ টি ৫০০ টাকার নোট হলো অর্থাৎ ১৪ হাজার টাকা। অল্প কিছু ভাংতি টাকা ছিলো সেগুলো নিয়ে সোজা চলে গেলাম টংগী বাজার। সেখান থেকে পাইকারি দরে কিছু গেঞ্জি ও কম্বল কিনলাম। সেগুলো বাসায় নিয়ে আসার পর নানান ধরনের কৈফিয়ত দিতে হলো ভাইদের ও আম্মুর কাছে। বাবা শুনেই খুশিতে আত্মহারা হলেন। তিনি আমাকে নিয়ে যাদের প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে গেঞ্জি এবং কম্বল বিতরণ করলেন। বিশেষ করে সেই শিশুটিকে আমিই গেঞ্জি ও কম্বল জড়িয়ে দিয়েছিলাম। তখন তার মুখের হাসিটা আমার মনে দাগ কেটেছে। আনমনে এখনো মাঝে মাঝে সেই হাসিটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। ক্যামেরা আর কেনা হয়ে উঠেনি। দুইদিন পর এক আপু বেড়াতে আসলেন, আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে একটা র্যাপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স দিয়ে বললেন এটা তোমার। খুলে তো আমি অবাক ,একি ! ভিতরে তো সুন্দর একটা ক্যামেরা । আপু আমার মনের সুপ্ত বাসনার খবর শুনে উপহার নিয়ে এসেছে। আমি তো অত্যন্ত খুশি, বাকবাকুম পায়রা, মাথায় দিয়ে টায়রা।বউ সাজবে কালকি , চড়বে সোনার পালকি আবৃত্তি করতে শুরু করলাম। টাকাগুলো জমিয়ে ক্যামেরা কিনতে হয়তো আরো বেশ সময় লাগতো, কিন্তু ব্যয় করে খুব দ্রুত আরো সুন্দর ক্যামেরা আমি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এটাই আমি আমার বিজয় মনে করি। পরিশেষে বলতে পারি ,অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে পারলে নিজের মুখে হাসি ফুটবেই । মুহাঃ আনাছ ফ্যামিলি মার্ট , আপনবাজার, বড়বাড়ী, গাজীপুর।