Firoz
সকাল বেলা পার্কে হাঁটতে বের হয়েছি।করোনার ভয়াবহ অবস্থা তখন দেশে।দীর্ঘ দিন লকডাউন এর পর আজ থেকে শিথিল হয়েছে।রাস্তায় এবং পার্কে খুব বেশি মানুষ এর আনাগোনা নেই।দেখলাম কিছু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ব্যায়াম করছে।আর ছিল দুজন বৃদ্ধা-বৃদ্ধ। হাঁটা শেষে চা খাচ্ছিলাম।দূর থেকে খেয়াল করলাম বৃদ্ধ হাঁপিয়ে উঠেছেন তাই বসে রইলেন।বৃদ্ধা একাই হাঁটতে থাকলেন।কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধাকে আর দেখতে পাচ্ছিলাম না।সম্ভবত হাঁটতে হাঁটতে একটু দূরে চলে গিয়েছিলেন। তার কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম বৃদ্ধ হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে দৌড়ে গেলাম সেখানে। জিজ্ঞাসা করলাম,চাচা কি হয়েছে আপনার? বৃদ্ধ বল্লেন- বাবা হঠাৎ বুকে খুব চাপ লাগতেছে। আমি বল্লাম-আপনার স্ত্রী কে ফোন দিন।নাম্বার বলেন। বৃদ্ধ বল্লেন- নাম্বার মনে নাই বাবা।মোবাইলে সেভ আছে। এ কথা বলতে না বলতেই বৃদ্ধ জ্ঞান হারালেন। ততক্ষণে অনেক মানুষ চারপাশে জড় হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এর ভয়াবহতা বুঝতে পেরে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য উপস্থিত মানুষ এর সাহায্য চাইলাম। দুজন তরুণ এগিয়ে আসল।তাদের সাহায্য নিয়ে একটি রিক্সায় করে নিকটস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এর দিকে রওনা হলাম। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করে তার ফোন থেকে ডায়াল নাম্বারে থাকা নাম্বারে ফোন দিলাম।তার ছেলে ধরেছিল। এরপর প্রচন্ড উৎকন্ঠায় একটা ঘন্টা গেল।ইতিমধ্যে বৃদ্ধের ছেলে ও তার স্ত্রী এসে গেছে।অনবরত কাঁদছিলো তারা। তারপর অবশেষে জানতে পারলাম রোগী এখন ঝুঁকিমুক্ত। ডাক্তার বললেন,আর একটু দেরি হলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হত। রোগীর জ্ঞান ফিরতে দেরি হবে।তাই যখন রোগীর স্ত্রী ও ছেলের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম- তখন ছেলেটি খুব শক্ত করে আমাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল। আমিও আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নি।দুজন তরুণ যারা কেউ কাউকে চেনে না,একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে অঝর ধারায় কাঁদছে! এ অশ্রু তে মিশে আছে বাবাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। এ অশ্রু তে মিশে আছে একজন মৃত্যপথযাত্রীর জীবন বাঁচানোর আনন্দ।যার অন্তরালে রচিত হয়েছে এক বিজয় গাঁথা।