Mahdy Hasan Talha
১. মাত্র কিছুদিন হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে সেনজার। এখনও ক্যাম্পাসের সবকিছু চেনা হয়ে ওঠেনি। টিএসসি, কলাভবন আর ভিসি চত্বর এই হাতেগুনা কয়েকটি জায়গা চেনা হয়েছে এই ক‘দিনে। গ্রাম থেকেই উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পার করেছে। তাই শহরে এসে এখানকার মানুষের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। জায়গা পেয়েছে ইকবাল হলে, তবে এখনও আবাসিকে উঠার সুযোগ হয়নি, তাই কাকরাইলে এক আত্মীয়ের সাথেই থাকা হয়। দেশের অবস্থাও ভালো না, সরকার পক্ষের সাথে পূর্ব বাংলার জনগণের স্নায়ুযুদ্ধ চলছেই। আবার ইকবাল হলের ছেলেরা “স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের” কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। এজন্য এই হলের ছেলেদের চোখে চোখে রাখতো মিলিটারিরা। গ্রামেই বড় হয়েছে সেনজার, সহজ সরল সেখানকার মানুষ। আইন আদালত খুব ভয় পায়, খাকি পোশাকের এই লোকগুলোকেও তাদের ভীষণ ভয়। হলে একদিন গিয়েছিল, মিলিটারিদের ভয়াল চোখগুলো তার ওপর আটকে ছিল অনেক্ষণ। বেশিক্ষণ থাকা হয়নি, বের হয়ে চলে এসেছে। এদিকে যার বাসায় উঠেছে কয়েকদিন যাবৎ উনিও বিরক্ত, কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না, সেনজার ব্যাপারটা বুঝতে পারে। তাই সিদ্ধান্ত নেয় সামনের মাসেই উঠে যাবে, হল প্রভোস্টের সাথে আলোচনা করে কনফার্ম হয় ২৪২ নাম্বার রুমে উঠবে। সেসময়ে গণরুম, র্যাগিংয়ের নামে অমানবিক টর্চার, ওরকম তেমন কিছুই ছিল না, তবুও ভয়। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ। এখানকার মানুষগুলো কেমন হবে কে জানে, একেকজন এসেছে একেক এলাকা থেকে। সকাল সকাল সেনজারের ঘুম ভাঙলো ডাকপিয়নের চেচামেচিতে। তার নামে চিঠি এসেছে, তাড়াতাড়ি নিতে বললো। আরও কিছু চিঠি আছে, সেগুলোও সকাল সকাল পৌঁছে দিতে হবে। চোখ কচলাতে কচলাতে চিঠি হাতে নিয়ে দেখলো মা চিঠি লিখেছেন, বাড়িতে অভিভাবক বলতে একমাত্র মা আছেন। বাবা মারা গেছেন অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। বাবার মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের গতিপথও বদলে গেছে, পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে পাওয়া জমি অন্য লোকজন দিয়ে চাষ হতো, সেখান থেকে যা পাওয়া যেত তাই দিয়ে চলতো সংসার। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে চিঠি পড়তে বসলো। মা খুব বেশি পড়াশোনা করেন নি, তবে অনেক ভালো শব্দচয়ন করতে পারেন। লেখার মধ্যে একটা শৈল্পিকতা কাজ করে, উনার উচ্চমার্গীয় শব্দচয়ন দেখে যেকেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে থাকবে, সেনজার চিঠি পড়া শুরু করলো, মায়ের প্রতিটি শব্দে শব্দে ভয় আর উৎকন্ঠা। সময় যত গড়াচ্ছে দেশের পরিস্থিতি তত খারাপের দিকে যাচ্ছে। ঢাকার জায়গায় জায়গায় সরকার বিরোধী মিছিল হচ্ছে, যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শহরজুড়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে মিলিটারির একাধিক দল। মা শঙ্কিত, ছেলেকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। সেনজার চিঠির জবাবে জানায় মাত্র হলে উঠছে, থাকার জায়গা কিছুটা গুছিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবে। মা জানেন, তার ছেলে সবসময় ঝামেলা এড়িয়ে চলে, তবুও মায়ের মন, একটু শঙ্কা তো থেকেই যায়। নাস্তা সেরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলো সেনজার। কাকরাইল থেকে খুব দূরে নয় ক্যাম্পাস, চাইলে হেটেও যাওয়া যায়। ক্যাম্পাসের বাসের অপেক্ষা না করে হেটেই রওয়ানা দিল আজ, রাস্তায় কয়েক দফা মিলিটারির জেরার মুখে পড়তে হলো, একবার ব্যাগও তল্লাশী চালালো তারা, তেমন কিছুই পেল না, ছেড়ে দিলো। মনেমনে রাগ হচ্ছিল, ক্যাম্পাসের বাসে করে গেলে এসব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সব কেন্দ্রীয় নেতারা উৎকন্ঠা আর ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে এদিক ছুটছেন, জমায়েত হচ্ছেন। ৭ মার্চের ভাষণের পর পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভার্সিটির প্রতিটি কোনায় কোনায় মিলিটারিরা অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে একাধিক ইউনিট কড়া পাহারায় রেখেছে পুরো এলাকা। সেনজারের ভালো লাগলো না এসব, বাসায় ফিরে আসলো। এসে শোনে তার আত্মীয় বাড়ি চলে যাবে, ঢাকার অবস্থা খুব খারাপ, লোকজন বলাবলি করছে যেকোন সময় অপারেশন হতে পারে। তাই সে গ্রামে চলে যাচ্ছে, পরিস্থিতি ভালো হলে পরে ঢাকায় আসবে। এই খবর শুনে অনেকটা বাধ্য হয়ে ঐদিনই হলে উঠার সিদ্ধান্ত নিলো। আপাতত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েই যাবে, পরে একদিন এসে সবকিছু নিয়ে যাবে। ২. বিকেলে একটা রিকশা ভাড়া করলো, তাকে ইকবাল হল পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। রিকশাওয়ালার বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই, কাজের চাপে এই বয়সেই অনেকটা নুয়ে পড়েছেন। নাম মতি মিয়া, ঢাকায় রিকশা চালান প্রায় ২০ বছর। কিন্তু গত কয়েকদিনের ঢাকার চিত্র তার কাছে একদম অচেনা। এত ভয়ংকর রূপ তার জীবনে কখনও দেখেন নি। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর, পদ্মার খপ্পরে পড়ে বাড়িঘর সবকিছু বিলীন হয়ে গেছে। এখন পরিবারকে রেখে এসেছেন এক প্রবাসীর পরিত্যক্ত বাড়িতে, তারা ওখানেই থাকে। মাস শেষে টাকা পাঠান, এভাবেই চলে সংসার। তবে গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি মতি মিয়াকে ভাবিয়ে তুলেছে, তার মন আর ঢাকায় টিকছে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সামনের সপ্তাহে রিকশা গ্যারেজে জমা দিয়ে বাড়ি চলে যাবেন। সেনজারের সাথে গল্প করতে করতে ভালোই ভাব জমিয়ে ফেলেছেন মতি মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সব অলিগলি তার মুখস্থ, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে ছেলেরা কেমন প্রতিবাদী ছিল, কাছ থেকে দেখেছেন, ছেলেদের চোখে যে আগুন তখন দেখেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে বর্তমান ছেলেদেরও একইরকমভাবে দেখেন। বুঝতে পারেন একটা বড়সড় সংগ্রাম ছাড়া এই ছেলেগুলো থামবে না। এদের রক্ত গরম, শাসক পক্ষের অন্যায় কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা তাদের নেই। এদের তেজদীপ্ত চলাফেরা দেখে সাহসের সঞ্চার হয়, আবার মিলিটারিদের যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব দেখে মুহুর্তেই উচ্ছ্বাসের ফানুস চুপসে যায়। ভয় হয়, আবার ৫২ এর মতো কোন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। সেনজারকে হলে পৌঁছে দিয়ে বাইরের রাস্তায় রিকশা থামিয়ে বসে পড়লো মতি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আজ আর রিকশা চালানোর ইচ্ছে নেই, এখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে তারপর গ্যারেজে গিয়ে রিকশা রেখে দেবে। আগামীকাল শুক্রবার, বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়তে হবে, খতিবের তেলাওয়াত সবার হৃদয় কাড়ে। উনি সপ্তাহে একদিনই নামাজ পড়ান। মতি কোন জুম‘আ মিস করে না। প্রকৃতি থেকে শীত চলে যাচ্ছে, এখন শহরজুড়ে উষ্ণ একটা আবহাওয়া। সন্ধ্যায় প্রকৃতিতে বাতাস দোলা দিয়ে যায়, শরীরে শিহরণ জাগায়। সারাদিনের ক্লান্তি আর এমন উস্কানি দেওয়া বাতাসে ঘুম পায় মতির, রিকশার সিটে বসে পা দুটি সামনের দিকে এলিয়ে দেয়। ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সে। মিলিটারির জেরা এড়াতে এই রাস্তা দিয়ে এখন তেমন লোকজন যাতায়াত করে না। যারা আসে অনেকটা বাধ্য হয়ে আসে। সন্ধ্যা হবার সাথে সাথেই রাস্তা একদম খালি হয়ে গেছে। হলের ছেলেরা আসা যাওয়া করছে, সেটাও একদম কম। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারাই বেশি আসা যাওয়া করছে, দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ। বঙ্গবন্ধুকে আটকের কানাঘোষা চলছে, যদি তাকে আটক করে ফেলা হয়, তাহলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়বে। তাই নেতারা মিলিত হয়েছেন ইকবাল হলে, পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। মিলিটারির বিশাল বহর এসে থেমেছে এখানে, সবাই সতর্ক অবস্থানে। মতি তখন গভীর ঘুমের ঘোরে, তার এদিকে খেয়াল নেই। ৩. রাত ১১টা, হঠাৎ সরগরম হয়ে উঠলো পুরো এলাকা, আচমকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, ঝাকে ঝাকে মিলিটারিরা আসতে শুরু করলো, সবার মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। কোন কথা না বলেই দূর থেকে শুরু করলো গুলি। একসাথে গর্জে উঠলো রিকয়েললেস রাইফেল, মেশিনগান আর মর্টার শেল। মতি কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝাঝরা হয়ে গেল তার বুক, শার্টের নিরাপত্তা বলয় ছেড়ে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকলো তাজা রক্ত। রিকশা থেকে নামার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। সোজা হয়ে বসতে পারছে না, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে। আস্তে আস্তে রিকশার সিটে এলিয়ে দিল গা, একসময় নিথর হয়ে হয়ে পড়ে রইল মতির দেহ। এতদিন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ছিল যেই ঢাবি এরিয়া, পরম শান্তির নিবাস ছিল ছাত্র, অছাত্র এমনকি সমাজের খেটে খাওয়া মানুষেরও জন্য। সেখানেই হচ্ছে তার সলিল-সমাধি। ভারি সব অস্ত্র নিয়ে এদিক ওদিক ছুটছে মিলিটারিরা, সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই গুলি করছে। যাকে গুলি করছে তাকে আগে কখনও দেখেনি, কি জন্য গুলি করছে সেটাও জানেনা তারা, শুধু জানে ওপর থেকে আদেশ এসেছে পূর্ব বাংলায় আজ অপারেশন হবে, কাউকেই জীবিত রাখা যাবে না। বাইরে গুলাগুলি আর সাইরেনের শব্দ শুনে কি হচ্ছে দেখার জন্য কয়েকজন হলের বাইরে এসে দাঁড়ালো। তাদের দেখা মাত্র ফের গর্জে উঠলো রাইফেল, এক নাগাড়ে চললো গুলি, যেন রক্তের নেশায় ক্ষুধার্ত হায়েনারা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। সন্ধ্যা থেকেই বিছানা গুছাচ্ছে সেনজার। নতুন জায়গায় এসেছে, সবকিছু ঠিকঠাক করতে একটু সময়ের প্রয়োজন, বাইরে চিৎকার চেচামেচি শুনে কি হচ্ছে দেখার জন্য একটু এগিয়ে গেল। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ানো মাত্রই তার দিকে রাইফেল তাক করেই পজিশন নিল একজন মিলিটারি। বয়স আর কত হবে, ত্রিশের কাছাকাছি, ক্লিনশেভ করা, মাথায় হেলমেটা থাকায় হেয়ারস্টাইল খুব একটা বুঝা যাচ্ছে না। চোখগুলো টানটান, শত শত মানুষের ভিড়েও যেকারো চোখ আটকে যাবে তার ওপর। সেনজার থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে তার অবস্থান, চাইলেই কথা বলা যায়, একটু গল্প করও নেওয়া যায়, কিন্তু সেসময় আর কই, দুই ঘন্টার মধ্যে পুরো এলাকা পরিষ্কার করতে হবে। কিছু বলতে যাচ্ছিল সেনজার, ততক্ষণে ট্রিগার চাপতে শুরু করেছে সেনা সদস্য। কথা গলা পর্যন্ত এসে থেমে গেল, ইতিমধ্যে একটা গুলি ভেদ করেছে সেনজারের বুক। কিছু বুঝে উঠার চেষ্টা করছে, আরেকটা গুলি এসে গলা পরখ করে চলে গেল। গলায় হাত দিল সে, গরম অনুভূত হলো, রক্ত বেরুচ্ছে ফিনকি দিয়ে, মিলিটারির মুখে পাশবিক হাসি। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে সেনজার, দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো, শরীরের ভার নিতে পারছে না। রক্ত মিছিল দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। মাটিতে শুয়ে পড়লো সেনজার, মায়ের কথা মনে পড়ছে, কথা দিয়েছিল সে শিগগিরই বাড়ি ফিরবে, গন্ডগোল শেষ হলে পরে ঢাকায় ব্যাক করবে। কিন্তু এখন ভাবছে সে যদি মারা যায় মা কি সে খবর জানতে পারবে, শেষকৃত্যের জন্য নিথর দেহটা কি কেউ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। যে আত্মীয়ের বাসায় থাকতো, তার কথাও মনে পড়ছে, উনি কি বাসায় গিয়ে পৌছাতে পেরেছেন, নাকি উনার ওপরও হামলে পড়েছে রক্তচোষা হয়েনারা। মায়ের মুখ চোখে ভাসছে, মনে হচ্ছে বাবা তাকে ইশারায় ডাকছেন। রক্ত বোধহয় আর শরীরে অবশিষ্ট নেই, ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে, ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, একটা মুচকি হাসি দিল, সে জানেনা তার অপরাধ কি, কিজন্য তাকে হত্যা করা হলো। শুধু জানে তার মতো আজ অনেকের কপালে এই ভাগ্য বরণ করতে হলো। কিছুক্ষণ পর! পুরো এলাকা নীরব হয়ে গেছে, কুকুরগুলোও আজ ভয়ে চুপচাপ, একবারের জন্যও শব্দ করেনি। ইকবাল হলে তখন বইছে রক্তের বন্যা, কোনরকম যারা লুকিয়ে প্রাণে বেঁচেছিল, তারা চুপিচুপি বাইরে বেরিয়ে আসলো, চোখের সামনে শুধু লাশ আর লাশ, একটু আগেও যাদের সাথে আড্ডা দিল, তারা আজ নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে। সবাই লাশ শনাক্তের চেষ্টা করছে, হলের সামনে সবার লাশ জড়ো করা হলো, শুধু দুইটা লাশ অপরিচিত, সেনজার আর মতি মিয়াকে কেউ চেনেনা। আগে কখনও কেউ দেখেও নি, সিদ্ধান্ত হলো চেনা লাশগুলো তাদের গ্রামের বাড়ি পাঠানো হবে। আর অপরিচিতদের আজিমপুরে কবর দেওয়া হবে। রাত শেষ হতেই চায় না, বিপদের সময় দীর্ঘ হয়, ঢাকার অবস্থাও এখন তাই। অতঃপর সকাল হলো, ঢাকা যেন এক যুদ্ধ বিধ্বস্ত নগরী। সহপাঠিরা লাশগুলো গ্রামের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করলো, একটা ভ্যান ভাড়া করে দুইটা লাশ পাঠানো হলো আজিমপুরের উদ্দেশ্যে, পাশাপাশি শুয়ে আছে মতি আর সেনজার। শুক্রবারে বায়তুল মোকাররমে জুম‘আর নামাজ পড়ার কথা ছিল মতি মিয়ার, এখন তার নিথর দেহ যাচ্ছে আজিমপুরে। দাফন হবে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে। গতকাল সন্ধ্যায় যে ছিল তার রিকশার যাত্রী, আজ এই মুহুর্তে তারা একই গন্তব্যে যাচ্ছে, অজ্ঞাতনামা পরিচয়ে উভয়ে অপরিচিত ভ্যানের যাত্রী।