বিজয়ের ইতিহাস ও বাংলাদেশের সূচনা

Nayem Noman

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যের শিকার ছিলো তৎকালীন পূর্ববাংলা তথা আমাদের বাংলাদের মানুষ । এই বৈষম্যতা, অবহেলা, অন্যায়, অপসাংস্কৃতি, অত্যাচার এসবের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। ‘বিজয়’ শব্দটা শুনলেই মনে হয় এর সাথে জড়িয়ে আছে আনন্দ, সুখ, খুশী। কিন্তু বাংলাদেশ বিজয়ের সাথে জড়িয়ে আছে যুদ্ধ, ত্যাগ, সাহসিকতা, শোক, স্বাধীনতা। একদিনে আমাদের এই স্বাধীনতা আসেনি। এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীন দেশ। এই সময়টি ছিলো বাঙালি জাতির সংগ্রামের সময়, লড়াইয়ের সময়। ইতিহাসের পাতায় বিজয়ের গল্প স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছি এই মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পূর্বে বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ববাংলা ছিলো পাকিস্তানের অন্তর্গত একটি প্রদেশ। প্রকৃতপক্ষে ’৪৭ এর দেশ ভাগের পর থেকেই পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যের শিকার ছিলো পূর্ববাংলা। এই বৈষম্যতা, অবহেলা, অন্যায়, সাংস্কৃতিক আক্রমণ, অত্যাচার এসবের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। এর ফলাফল হচ্ছে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকে বাঙালি জাতির ওপর শুরু হয় বৈষম্য, শোষণ, অত্যাচার নির্যাতন। পাকিস্তানের এই শোষণ বঞ্জনা আর অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি সোচ্চার হতে থাকে এবং ধাপে ধাপে পাকিস্তানের অত্যাচরের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। বাঙালির এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির এই আন্দোলনকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের পাশে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িযে দেয়। ওই সময় পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দিয়ে সরাসরি পক্ষ্য নেয়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৬ই ডিসেম্বর বীর বাঙালির বিজয় দিবস। এ বছর দিনটিতে বাঙালি জাতি বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ করছে। উল্লেখ্য, আমাদের বিজয় সেদিনই ষোলকলা পূর্ণ হবে, যেদিন বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের অবদানে দেশে গণতন্ত্র চর্চা হবে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে, বাক স্বাধীনতা থাকবে, ক্যামেরা ও কলমের স্বাধীনতা থাকবে, বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মুখ হাঁস্যোজ্বল থাকবে, দেশে থাকবে না গুম,খুন,দুর্নীতি,ধর্ষণ,চাঁদাবাজি, থাকবে না কোনো অনাহারী, থাকবে না অশিক্ষা, সড়কে থাকবে জীবনের নিরাপত্তা। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ।